reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

এ বছর বিশ্বের সেরা ব্যক্তিত্ব গ্রেটা থানবার্গ

জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাণ ও প্রকৃতি ধ্বংসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন সৃষ্টি করা সুইডেনের স্কুলছাত্রী গ্রেটা থানবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৯ সালের ‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছন।

১৯২৭ সাল থেকে শুরু হওয়া টাইম ম্যাগাজিনের এই নির্বাচনে এবারই প্রথম ১৬ বছর বয়সী কেউ জয়ী হলো।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অবিলম্বে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে স্কুল বাদ দিয়ে টানা তিন সপ্তাহ সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে বসে থাকেন গ্রেটা। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, সেজন্য প্রতিবাদ। তিনি তার কর্মকাণ্ডের কথা ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে পোস্ট করেন, এবং তখন থেকেই ক্রমান্বয়ে জনমত তৈরি করতে থাকেন।

এরপর, সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ঘোষণা দেন প্রতি শুক্রবার তিনি সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন, যতদিন পর্যন্ত না তারা তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যাপার অঙ্গীকার দেয়। উল্লেখ্য, তার এই প্রস্তাবের সাথে ফ্রান্সের প্যারিস চুক্তির সাদৃশ্য রয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত গ্রেটার সবচেয়ে বড় আন্দোলনটি হয়েছে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ, শুক্রবার। এই আন্দোলনের নাম রাখা হয়েছে ‘ফ্রাইডেস ফর দ্য ফিউচার’।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে #FridaysForFuture ট্রেন্ডের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন গ্রেটা, যেটি প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৫ মার্চ। এদিন তার ডাকে সাড়া দিয়ে জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ ১০৫টি দেশের ১,৬৫৯টি স্থানে শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে।

গ্রেটার ডাকা এ বিক্ষোভ কর্মসূচি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো। অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলের পড়া বাদ দিয়ে রাস্তায় নামবে, এ বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলো না রক্ষণশীল অনেক মানুষই। তবে কেউ কেউ আবার এটিকে কেবল নৈতিকই নয়, সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলেও মনে করছিলো। তাদের মতে, বর্তমানে অবস্থা যতটা সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে, তাতে এ ধরনের আন্দোলনের প্রয়োজন আছে।

এ বিষয়ে দ্য কনভার্সেশনে দার্শনিক রুপার্ট রিড লিখেছিলেন,

‘বিষয়টি যখন জলবায়ু পরিবর্তন, আমাদের প্রাপ্তবয়স্কদের এখন বোঝা দরকার যে আমাদের এখন আর সেই অবস্থা নেই যে বাচ্চাদেরকে বলব তাদের কী করা উচিত বা উচিত না। আমাদের এই আন্দোলনে এ কারণেই সমর্থন জানানো উচিত যে, এতদিন আমাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এখন আমরা এ ব্যাপারে কিছু বলবার মতো নৈতিক অধিকার হারিয়েছি।’

নিজেকে টুইটারে ‘১৬ বছর বয়সী অ্যাসপার্গার সিনড্রোমে আক্রান্ত জলবায়ু কর্মী’ হিসেবে পরিচয় দেয়া গ্রেটা টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৮ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী কিশোর-কিশোরীদেরও একজন। এবার তার সাফল্যের মুকুটে যোগ হলো আরো একটি পালক।

গ্রেটাকে টাইমের পারসন অফ দ্য ইয়ার ঘোষণার সময় তিনি স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থান করছিলেন। সেখানে গত ২ ডিসেম্বর থেকে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন চলছে। যা আগামী ১৩ ডিসেম্বর শেষ হবে।

গ্রেটা সেখানে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করছিলেন। গ্রেটা বলছিলেন, আগামী এক দশকেই পৃথিবীর ভবিষ্যত নির্ধারণ হয়ে যাবে। সুতরাং বিশ্ব নেতাদের উচিত গালভরা কথামালা বাদ দিয়ে বাস্তব কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

গ্রেটাকে পারসন অফ দ্য ইয়ার ঘোষণার সময় টাইম ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক এডওয়ার্ড ফেলসেনথাল বলেন, ‘চলতি বছরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইস্যুতে সবচেয়ে বড় স্বর হয় উঠেছেন গ্রেটা। একেবারে শুন্য থেকে তিনি একটি বৈশ্বিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন।’

টাইটানিকখ্যাত অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও তাকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘মানবজাতির ইতিহাসে এমন সময় খুব কম এসেছে, যখন আওয়াজ এত কেন্দ্রীয়ভাবে ও রূপান্তরমূলক পদ্ধতিতে বিস্তৃত হয়েছে। গ্রেটা থানবার্গ আমাদের সময়ের নেতা হয়ে এসেছেন’।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্বের সেরা ব্যক্তিত্ব,গ্রেটা থানবার্গ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close