সম্পাদকীয়

  ৩০ আগস্ট, ২০১৯

রাতের ফ্লাইওভার নিরাপদ হোক

জীবনের সব ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি মানুষই চায় জীবনটা নিরাপদ হোক। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অথবা সামাজিকসহ জীবনের সব ক্ষেত্রেই এ নিরাপদ শব্দটিকে খুঁজে ফিরছে মানুষ। বিবর্তনের শুরু থেকে আজ অবধি এই খুঁজে ফেরার যেন শেষ নেই। কিন্তু নিরাপদ শব্দটির পরিপূর্ণ অংশকে কখনো মুঠোয় আনা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে একেবারে যে পারেনি তাও নয়।

দেশ বিবেচনায় কোথাও কম আবার কোথাও তুলনামূলক বিচারে কিছুটা বেশি। পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে, পৃথিবীর কোনো মানুষই পুরোপুরি নিরাপদ থাকার কথা চিন্তাও করে না। তারা ন্যূনতম নিরাপদ একটি সমাজব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করতে আগ্রহী। কিন্তু বিশ্ব সমাজব্যবস্থা আমাদের সে অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এক খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পৃথিবী।

ঠিক এ রকম একটা পরিবেশে বাংলাদেশও তার নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে ভেবে থাকে। বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই এর ব্যতিক্রম নয়। যে যার ক্ষমতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে কাজটি করে থাকে। বাংলাদেশও করছে এবং তা অনেকটা সফলতার সঙ্গেই করছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল করার কাজে দেশটি যা করেছে তাকে ইতিবাচক আখ্যায়িত করা যায়। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তবু বলতে হয়, আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত ক্ষতগুলোকে এখনো মুছে ফেলতে পারিনি। এখনো রক্তাক্ত হচ্ছে সমাজের কিছু কিছু অংশ। যেখান থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আশাবাদী। এ রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের মতো সরকারের ইতিবাচক কর্মসূচিই আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

ইদানীং রাতের ফ্লাইওভার নিরাপদ থাকছে না। সরকার অনেক টাকা বিনিয়োগ করে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। মানুষ এর সুফলও ভোগ করছে। কিন্তু কিছু মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা ভেঙে পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। রাতের ফ্লাইওভারে ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায় নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ছিনতাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে খুনের ঘটনাও ঘটল।

গত রোববার গভীর রাতে মালিবাগ ফ্লাইওভারে রাইডশেয়ারিং মোটরবাইক চালক মিলনকে গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে যাত্রীবেশী এক ছিনতাইকারী। হত্যার পর ছিনতাইকারী মিলনের মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল উদ্ধার বা খুনিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আমরা মনে করি, খুনিকে গ্রেফতার বা মোটরসাইকেল উদ্ধার হলেই সমস্যার সমাধান হবে না। খুঁজতে হবে সমস্যার উৎস।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ঢাকার বেশকিছু এলাকার সড়ক ও ফ্লাইওভার বাতিহীন অবস্থায় রয়েছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন এসব এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। আর এই এলাকাকেই অভয়ারণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। এ ছাড়া পুলিশের তৎপরতাও তেমন একটা চোখে পড়ে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনারের ভাষ্য মতে, ফোর্স (জনবল) কম থাকায় রাতে সব সড়ক বা ফ্লাইওভারে পুলিশ মোতায়েন রাখা সম্ভব হয় না।

এখন প্রশ্ন হলো, এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? বাতি জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব যাদের তারা কি কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে থাকেন। তাদের দায়িত্বটা কী! আর পুলিশ বিভাগ যদি জনবলের অভাব বলে দায় এড়িয়ে যেতে চায় তাহলে জননিরাপত্তার মেরুদন্ড সোজা করবে কে? আমরা মনে করি, যাদের ওপরে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে; যেকোনো কারণেই হোক তারা তা করছেন না। রাষ্ট্রকে সেখানেই মেরামত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টি ভেবে দেখবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফ্লাইওভার,রাজধানী,রাত,নিরাপদ সড়ক,রাতের নিরাপত্তা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close