সম্পাদকীয়

  ১৬ আগস্ট, ২০১৯

চামড়া শিল্প রক্ষায় শক্ত পদক্ষেপ চাই

ধান আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান উপকরণ। চলতি মৌসুমে ধান যখন ঘরে উঠল, বাতাসেও আনন্দের গন্ধ ছিল। উৎপাদনকারী কৃষকও ছিল স্বপ্নে বিভোর। কেননা ফসলের উৎপাদন ছিল ভালো। আর সে কারণেই আয়ের পরিমাণ আরো ঘনীভূত হবে। কিন্তু না! রাহুর আগ্রাসন তাদের এই স্বপ্নকে করল চূর্ণবিচূর্ণ। রাহুর বেশে সিন্ডিকেট নামধারী গোষ্ঠীরাই গ্রাস করল চাঁদের সব সৌন্দর্য। নিমিষেই হারিয়ে গেল আকাঙ্ক্ষার প্রতিটি পিলার। ভেঙে পড়ল কৃষকের স্বপ্নের বাগান। সমাজে দেখা গেল এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। আলোচনা-পর্যালোচনাও কম হলো না। কিন্তু ফলাফলে তথৈবচ। সরকারের পক্ষ থেকে নড়েচড়ে বসতে দেখা গেলেও কোনো পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করার কার্যকারণ এখনো চোখে পড়েনি। স্থায়ী সমাধানের কোনো চিত্র ফুটে উঠেনি ক্যানভাসে।

ধানের ওপর সিন্ডিকেটের আগ্রাসন শেষ হতে না হতেই একই আঘাত নেমে এলো কোরবানির পশুর চামড়ার ওপর। এবারের আঘাত এতটাই প্রবল যে, বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে চামড়ার বাজার। বেশি মুনাফার লোভে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কিনতে এগিয়ে আসেননি ব্যবসায়ীরা। আর সে কারণেই ঈদুল আযহায় কোরবানি হওয়া পশুর চামড়ার দাম সমতটে নেমে এসেছে।

চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলেছেন, এবার চামড়ার দাম স্মরণকালের মধ্যে নিম্নতম। ন্যূনতম দাম না পেয়ে রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে অনেকেই চামড়া ফেলে দিয়েছেন ভাগাড়ে। আবার অনেককেই দেখা গেছে মাটিচাপা করতে। এভাবেই চামড়া নষ্ট করেছেন কোরবানিদাতা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দানের চামড়া বিক্রি না করতে পেরে মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত। স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, চামড়ার দাম এতটা কমে যাওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। আর এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রফতানিকারকরা চাইলে কাঁচা চামড়া রফতানি করতে পারবেন। পরিবেশ ও পরিস্থিতি বলছে, সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। তৃণমূলের ব্যবসায়ীরা এতে ভালো দাম পাবেন। পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ট্যানারি মালিক ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারীরা খুশি হতে পারেননি।

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে চামড়ার দাম ফেরাতে সক্ষম হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। সংশয় তৈরি হয়েছে আমাদের অর্থনীতিতে। কেননা তৈরি পোশাকশিল্পের পর এ দেশে রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত চামড়া শিল্প।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেয় তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ কম। আর সর্বশেষ অর্থবছরেও চামড়া খাতের রফতানি আয় নিম্নমুখীতেই রয়েছে সীমাবদ্ধ। ঠিক এ রকম এক পরিবেশ ও পরিস্থিতির মধ্যে এবারের চামড়া নিয়ে যে খেলা হয়ে গেল, তাকে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু বলার অবকাশ আছে কি না জানা নেই।

দেশে প্রস্তুতকৃত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ৯৫ ভাগই বিদেশে রফতানি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কে বা কারা যেন এ শিল্পকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। যারই প্রতিচ্ছবি আজকের চামড়া বাজার। আমরা মনে করি, এ অপচেষ্টাকে প্রতিহত করা সরকার ও দেশের সব নাগরিকের আশু দায়িত্ব। আর সরকারকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। খুঁজে পেতে হবে স্থায়ী সমাধান। আমরা সেই সমাধানের অপেক্ষায় থাকলাম।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চামড়া শিল্প,পদক্ষেপ,সম্পাদকীয়,পশুর চামড়া
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close