সম্পাদকীয়

  ০৪ আগস্ট, ২০১৯

সুসংবাদ দিলো চট্টগ্রাম বন্দর

চারপাশে শুধু মন্দ খবর। পত্রিকা খুললেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। তবে, এত সব খারাপের মধ্যেও কিছু কিছু সংবাদ দেশ এবং জাতিকে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করে। মনে হয় আমরা ফুরিয়ে যাইনি। এখনো সম্ভাবনা আছে। সম্ভাবনা আছে নতুন প্রজন্মের হাতে ইতিবাচক কিছু তুলে দেওয়ার। পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে যখন দেখি, ছয় ধাপ এগোলো চট্টগ্রাম বন্দর, বুকটা ভরে যায়। মনে হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যদি এমনটা হতো! যদি বন্যাকে আমরা প্রতিরোধ করতে পারতাম। সন্ত্রাসকে রুখে দিয়ে, মাদককে প্রতিহত করে, দুর্নীতিকে শেকড়সমেত উৎপাটন করে প্রতিটি সকালকে পাখিদের কলকাকলিতে ভরিয়ে তুলতে পারতাম। অনেকেই বলবেন, লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নতুবা স্বপ্নবিলাসী।

যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন না কেন, মূল কথা হচ্ছে—একজন পারলে আমরা পারব না কেন! আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমরাও পারি। দেশের সব মানুষ দুর্বৃত্ত নয়। কেউ কেউ সেই দলের সদস্য। তবে কি আমরা অল্প কিছু মানুষ নামধারী দুর্বৃত্তের কাছে পরাজয় মেনে নেব? না, তা কখনো মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আর সম্ভব নয় বলেই মাঝেমধ্যে এ রকম কিছু সংবাদ আমাদের মরচে পড়া চেতনাকে ধারালো করে তোলে। আমরা শানিত হই বা শানিত করার চেষ্টা করি। স্বপ্ন আছে বলেই তো মানুষের জীবনে সংগ্রাম আছে। আর সংগ্রামী মানুষই পারে দেশকে মর্যাদাবান রাষ্ট্রে পরিণত করতে।

পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে প্রকাশ, কনটেইনার পরিবহনে সংখ্যার হিসাবে বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৪তম। এক বছরের ব্যবধানে এই বন্দর এগিয়েছে ছয় ধাপ। গত এক দশকে ক্রমতালিকায় কয়েকবার পিছিয়ে পড়ার পরও সব মিলিয়ে ৩১ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। লন্ডনভিত্তিক শিপিংবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ‘লয়েড লিস্ট’-এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত ২৯ জুলাই। তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্বের বন্দরগুলোর কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এ তালিকা তৈরি করা হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৫তম। ২০১১, ১২ ও ১৪ সালে একধাপ করে পিছিয়ে পড়ার পর গত ১০ বছরের মধ্যে সাত বছরই এগিয়েছে। এর মধ্যে গত চার বছর টানা উন্নতি করেছে বন্দরটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দর যে সাফল্য অর্জন করেছে, তার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কর্মরত সবাইকে ঘাম ঝরাতে হয়েছে অনেক। তাদের এই পরিশ্রম/সংগ্রামের ফলেই সম্ভব হয়েছে এই অর্জন।

বন্দরের এই অর্জনকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। এই অর্জনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত আমাদের অর্থনীতি। অর্জন যে পরিমাণ বেড়েছে, অর্থনীতির চাকার গতিবৃদ্ধিও হয়েছে সেই পরিমাণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক তালিকায় এগিয়ে যাওয়া বন্দরের জন্য একটি বড় সাফল্য। বন্দরকেন্দ্রিক যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে এই তালিকায় আরো উন্নতি করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি উৎপাদনশীল খাতে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তার প্রভাবে ক্রমতালিকায় এই উন্নতি। উৎপাদনশীল খাতের প্রবৃদ্ধির চাপ ভবিষ্যতে বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। তখন এ চাপ সহ্য করার মতো ক্ষমতা বর্তমান বন্দরের নেই। একে আরো গতিশীল করার জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সংযোজন করে বন্দরে ক্ষমতা সম্প্রসারণ খুবই জরুরি। তা না হলে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বন্দরকে। তাই, সময় থাকতে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চট্টগ্রাম বন্দর,সুসংবাদ,সম্পাদকীয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close