সম্পাদকীয়

  ২২ জুন, ২০১৯

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মানবতা জিতবেই

প্রবাহমান প্রতিটি নদীর পানি গড়িয়ে চলেছে তার গন্তব্যে। সময়ও চলেছে তার নিজস্ব গতিতে। কিন্তু নাফ নদীর তীরে বসবাসরত মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। আরাকান থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত হয়ে জীবনযাপন করছে তারা। এদের সংখ্যাও কম নয়। ১১ লাখের কাছাকাছি। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং সরকারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মুখে নিরস্ত্র এই রোহিঙ্গা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী নিজ ভূমি ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মানবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দেয়। সম্ভবত একসঙ্গে এত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অপর একটি দেশে দীর্ঘদিন আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। বিশ্বের অনেক দেশ এ ঘটনার নিন্দা জানালেও সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকায় কাউকে তেমন একটা এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর ভূমিকাও নেতিবাচক। পাশাপাশি জাতিসংঘের ভূমিকা অনেকটা ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো।

ঠিক এ রকম এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি এত জটিল হওয়ার জন্য জাতিসংঘেরও দায় রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, জাতিসংঘ বিষয়টির শুরুতে অনেক কিছুই চেপে গেছে। অনেক আগে থেকে মিয়ানমার শাসকগোষ্ঠী কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদী বৌদ্ধ পুরোহিতদের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর কাজ শুরু করে। বর্তমান সময়ে জাতিসংঘ যা বলছে, তা কেবল বাংলাদেশকে উপলক্ষ করে। এখন উচিত এই পথ পরিহার করে মিয়ানমারের দিকে বেশি নজর দেওয়া, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়। তিনি বলেছেন, বিশ্বজুড়ে মানবতা যাতে লঙ্ঘিত না হয়, তা দেখভাল করার লক্ষ্যেই জেনেভা কনভেনশনের জন্ম। কনভেনশনের আইনগুলো মানতে বাধ্য করা হলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতো। কিন্তু বিশ্ব সংস্থা তা করতে না পারার কারণে এ সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সব সময়ই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনে সক্রিয় হোক, যাতে এ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী তাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরে যেতে পারে। আমরা মানবতার পাশে সব সময়ই থেকেছি এবং এখনো তা অব্যাহত রেখেছি। আমরাও চাই রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনের প্রশ্নে আজ বিশ্ব সম্প্রদায়ও মানবতার পক্ষে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে। দ্রুত একটি ইতিবাচক সমাধানে এগিয়ে আসবে।

আমরা মনে করি, পরাশক্তিরাই এ সমস্যা সমাধানে প্রধান বাধা। তাদের কাছে মানবতার মূল্য আজ শূন্যের কোঠায়। নিজ স্বার্থের বাইরে তারা কোনো কিছু করার কথা তারা ভাবেন না। আর সে কারণে সমস্যা সমাধানে আমরা পরাশক্তির পরস্পরের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে পারি। বলার প্রশ্নে যতটা সহজ, বাস্তবায়ন ততটা কঠিন। এ কথা মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই ভাবছে। তাদের ভাবনার সঙ্গে এটুকু যোগ করতে চাই, সাবধানের মার নেই। যা কিছুই করি না কেন, চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই তা যেন করা হয়। সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীও সে পথেই চলেছেন। তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ধীরে চলার নীতিই এখানে অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলেই আমাদের ধারণা। তবে প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা থাকে। আমাদেরও আছে। আমরা বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত মানবতার জয় হবেই।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন,মানবতা,সম্পাদকীয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close