সম্পাদকীয়

  ১৫ জুন, ২০১৯

ভারসাম্যপূর্ণ বাজেটকে স্বাগত

দেশের মানুষকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার দায়িত্ব সরকারের। অর্থাৎ মানুষের কল্যাণেই সরকার। পাশাপাশি সরকারের সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। আর বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সমগ্র জনসমষ্টির কল্যাণে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহৃত থোক বরাদ্দ। বিশাল ব্যয় ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশায় আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপিত হয়েছে সংসদে।

প্রস্তাবিত বাজেটের ব্যয় বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। বাজেটে একদিকে যেমন দেশের চার কোটি মানুষকে নতুন করে করের আওতায় আনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে (এ মুহূর্তে বাংলাদেশের করদাতার সংখ্যা মাত্র ২১-২২ লাখ)। পাশাপাশি প্রস্তাবিত বাজেটে গ্রামীণ জনপদের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গ্রামাঞ্চলে শহরের ব্যবহারিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে; যা বাজেটের একটি ইতিবাচক অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এবারের বাজেট বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি। মূল এডিপি ঋণের আওতায় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭১১ কোটি। ব্যাংকঋণ ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় রাখা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি। সার্বিক হিসাবে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের সার্বিক উন্নয়নের যে চিত্র বা স্বপ্নের রূপরেখা টানা হয়েছে, একইভাবে রাজস্ব আয় বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব ৫০ শতাংশ আয়কর থেকে আহরণের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এক দশক আগেও আয়কর থেকে এনবিআর মোট রাজস্বের ২০ শতাংশ আহরণ করে, যা বর্তমানে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা আশা করতেই পারি, আগামীর ব্যারোমিটারে এ উচ্চতা আরো বাড়বে এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তারা সততার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেন, তা হলে এ ক্ষেত্রে একটি মাইলফলকও তৈরি হতে পারে।

আমাদের দেশের দুর্নীতির কথা সবারই জানা। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এ দুর্নীতিই একটি বড় বাধা হয়ে আছে। একে অপসারণ করার কাজটি সরকারের। আইনের কঠোর বাস্তবায়নের মধ্যেই এ রোগ অপসারণ হতে পারে। এ ব্যাপারে সরকার কোনো আপস করবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। কেননা, যেকোনো আপস প্রস্তাবিত বাজেটকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে আহত করতে পারে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, রাজস্ব আদায় খুব একটা সহজ কাজ নয়। প্রকৃত অর্থেই কঠিন। বিশেষ করে দুর্নীতি আক্রান্ত সমাজে তা একটি দুরূহ কাজ। তবু বলতে হয়, আমাদের সামনে সুখ ও সমৃদ্ধির রেলে ওঠার স্বপ্ন এসে হাতছানি দিচ্ছে— তখন চেষ্টা করতে আপত্তি কোথায়! শতভাগ না পারলেও আমরা যদি ৭০ শতাংশে পৌঁছাতে সক্ষম হই, তাতেইবা কম কী! সুতরাং এখন প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তির। ইতিবাচক ইচ্ছাশক্তি।

সরকারে ইচ্ছার প্রশ্নে সবার আস্থায় কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু বাস্তবায়নে আমরা ঘাটতির নমুনা দেখেছি। এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য তা স্মরণকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আমরা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলতে চাই, কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়; শিক্ষার গুণগত মানের দিকে সরকারের মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে। আশা করব, সরকার তা করবে। আমরা কেবল সনদপ্রত্যাশী নই, মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ একটি জাতি গঠনে আগ্রহী।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাজেট,২০১৯-২০ অর্থবছর,প্রস্তাবিত বাজেট,বড় বাজেট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close