সম্পাদকীয়

  ১০ জুন, ২০১৯

রোহিঙ্গা ইস্যু

মিয়ানমারের নতুন ফাঁদ

বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা একটি বড় সমস্যা। মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, দুই বছরে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। আসিয়ান-ইরাতের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, মিয়ানমার মনে করছে, তাদের দেশ থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাই বাংলাদেশে গিয়েছে, যা মূল হিসাবের অর্ধেকেরও কম। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের যে সংখ্যার কথা জানিয়েছে, তা বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের হিসাবের চেয়ে অনেক কম। তবে প্রতিবেদনের সত্যতা এখনো জানা যায়নি।

প্রতিবেদনের বিপরীতে মন্তব্য আসতে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়টি যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি। সেখানে দুই বছরের মধ্যে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের যে সাম্ভাব্য তুলে ধরা হয়েছে, তা হাস্যকর।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে হামলার পর রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত লাখ মানুষ। এর সঙ্গে রয়েছে ১৯৮২ সাল থেকে পালিয়ে আসা আরো তিন লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।

প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে যে ব্যাখ্যাই আসুক না কেন, মিয়ানমার সরকারের ভূমিকা এখানে ইতিবাচক নয়। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে এ যাবৎ তারা যতগুলো আশ্বাস দিয়েছে বা চুক্তি করেছে, তার একটিও মিয়ানমার রক্ষা করেনি। সম্ভবত সে কারণেই বাংলাদেশের মানুষ এখন আর মিয়ানমারের কোনো আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এ দেশের মানুষ আজ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। গত ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে এ কথা সত্য, প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। এ পর্যায়ে এটুকুই বলা যায়, প্রত্যাবাসনের শেষ কোথায়, ভবিতব্যই তা বলে দেবে। তবে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হয়। তার আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই এ ব্যাপারে জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। আশা করা যায়, নিকট ভবিষ্যতে তার হাত ধরেই এর একটি ইতিবাচক সমাধান হবে। নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার ফিরে পাবে ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফাঁদ,মিয়ানমার,সম্পাদকীয়,রোহিঙ্গা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close