সম্পাদকীয়
অ্যান্টিবায়োটিক যখন জাতীয় উদ্বেগ
সীমা অতিক্রম করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোরআনেও বলা হয়েছে, সীমালঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। অর্থাৎ যেকোনো ক্ষেত্রেই সীমালঙ্ঘনের প্রশ্নে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যখনই আমরা সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছি, দ্রুত অথবা দেরিতে হোক, তার ফল ভোগ করতে হয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে সেই ভোগান্তিরও যেন আলামত দরজার গোড়ায় এসে কড়া নাড়ছে। যথেচ্ছ ব্যবহারে আমাদের শরীরে আর কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক- বক্তব্যটি বিশেষজ্ঞদের।
তারা বলছেন, আইসিইউতে ৮০ ভাগ রোগীর মৃত্যুর কারণ অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে কাজ না করা। শুধু আইসিইউ অথবা সিসিইউর রোগীরাই নন, শিশু থেকে আবালবৃদ্ধবনিতা, সব বয়সি মানুষের শরীরে আজ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে দেহের মধ্যে বসে থাকা জীবাণুগুলো। বিষয়টি পুরো জাতির জন্য উদ্বেগের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যত দিন না ওষুধ বিক্রি বন্ধ হবে, তত দিন অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার ঠেকানো যাবে না। তাদের মতে, এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন। পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করা না গেলে দেশ ও জাতি যেকোনো সময় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। তারা এও বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে একের পর এক অ্যান্টিবায়োটিকের গুণাবলি অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
আমাদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। সীমালঙ্ঘন করে আমরা যথেচ্ছভাবে এই জীবনরক্ষাকারী ওষুধের ব্যবহারকে ত্বরান্বিত করেছি বলেই আজ চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স আজ আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওষুধনীতিতে বলা আছে, রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। হাইকোর্টও রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অধিদফতরের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, কেবল প্রেসক্রিপশনের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা গেলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? এ প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) এক গবেষণায় বলা হয়, গাভীর খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পাওয়া গেছে সিসা ও বিভিন্ন ধরনের অণুজীব, যা ছিল মাত্রাতিরিক্ত। এগুলো সহনীয় মাত্রার বেশি হওয়ার অর্থ হলো দেহের অভ্যন্তরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতাকে বিনষ্ট করা।
সুতরাং; এ সমস্যার সমাধান শুধু প্রেসক্রিপশনের ওপর সীমাবদ্ধ রাখলে উদ্দেশ্য সফল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। প্রেসক্রিপশনের বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি খাদ্যপণ্যকে ভেজালমুক্ত করা না গেলে বিষয়টির পরিণতি নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাবে। আমরা মনে করি, জাতির এ উদ্বেগকে সরাতে সর্বাগ্রে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন। যেখানে জনগণকে সচেতন করাই হবে প্রধান কাজ এবং এ কাজে মিডিয়াই হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার।
পিডিএসও/তাজ