সম্পাদকীয়

  ০২ এপ্রিল, ২০১৯

দেশের সমুদ্র পরিবহনকে রক্ষা জরুরি

‘আদার বেপারির জাহাজের খবর’ বলে একসময় আমরা অনেক বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা ছিল। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় তা আর সম্ভব নয়। কারণ এর সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক যুক্ত। বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রসারে আগেও যেমন ছিল সমুদ্রের গুরুত্ব, বর্তমানেও তার প্রসার ও বিস্তৃতি অনেক ঘটেছে। আর এ ক্ষেত্রে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে জাহাজ। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন বিদেশি জাহাজ মালিকরা। সেই সুবাদে তারা দেশ থেকে প্রতি বছর জাহাজ ভাড়া বাবদ কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। কোনো প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই দীর্ঘদিন বিদেশি জাহাজ মালিকরা বাংলাদেশে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ দেশের জাহাজ মালিকদের সুরক্ষার জন্য কাগজে-কলমে আইন থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘দেশের সমুদ্র পরিবহন বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আমদানি-রফতানিতে কনটেইনার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের সুবাধে বিদেশি জাহাজ মালিকরা ঠিক কী অঙ্কের টাকা এ দেশে আয় করছেন এবং কী অঙ্কের টাকা বিদেশে জাহাজ ভাড়া হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের এক তথ্যে জানা গেছে, দেশে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে সমুদ্রগামী জাহাজের খরচ কমপক্ষে ৪ বিলিয়ন ডলার। যার অন্তত ৯৫ শতাংশ বিদেশি জাহাজ মালিকরা নিয়ে যাচ্ছেন। বিএসসির বহরে ৪০ থেকে ৫০টি জাহাজ থাকা বাঞ্ছনীয় হলেও অর্থাভাবে গত ২৭ বছরে কোনো জাহাজ সংযোজিত হয়নি।

ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, বাংলাদেশি জাহাজ নেই বলেই এ ক্ষেত্রে বিদেশিরা একচেটিয়া রাজত্ব করছে। আগে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) অনেকগুলো জাহাজ ছিল। তার সঙ্গে দেশীয় মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি জাহাজও সক্রিয় ছিল। কিন্তু ক্রমান্বয়ে প্রতিযোগিতায় বিদেশিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা চলতে পারেনি। এই সুযোগে বিদেশি জাহাজ মালিকরা একচেটিয়া কর্তৃত্ব করে যাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় দেশ যখন ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন সেই ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমরা জানি, বাংলাদেশের সমুদ্রগামী জাহাজ পরিবহনশিল্পকে রক্ষার জন্য ১৯৮২ সালে ফ্লাগ ভেসেল প্রটেকশন নামে একটি অর্ডিন্যান্স প্রণীত হয়। এতে বলা হয়েছে, আমদানি ও রফতানি মালামাল বহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ অগ্রাধিকার পাবে। মূলত দেশের স্বার্থে বিদেশি জাহাজ কোম্পানির একচেটিয়াত্ব ভেঙে দেশি জাহাজশিল্প গড়ে তোলার জন্যই এটি ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু এরপরও দেশীয় মালিকরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। কারণ দেশের জাহাজ বলতে তেমন কিছুই নেই। যদি দেশের জাহাজ বাড়ত, তা হলে বাইরে চলে যাওয়া বিপুল অর্থ দেশেই রাখা সম্ভব হতো। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অত্যন্ত সুকৌশলে বিদেশিরা এ ক্ষেত্রে নিজেদের আধিপত্য দিন দিন বিস্তার করেই চলেছেন। আমরা আশা করি, বর্তমান উন্নয়নবান্ধব সরকার ক্রমশ মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া শিপিং সেক্টরটি দ্রুত জাগিয়ে তুলবে। দেশের স্বার্থে তা জরুরিও বটে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সমুদ্র পরিবহন,সম্পাদকীয়,জাহাজ শিল্প
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close