সম্পাদকীয়

  ০২ মার্চ, ২০১৯

নদী রক্ষা কর্মসূচি সফল হোক

আইন আছে। বাস্তবায়ন নেই। এ চিত্র সর্বত্রই। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দুর্নীতির করালগ্রাসে সবকিছুই যেন তছনছ হওয়ার উপক্রম। সমাজব্যবস্থার অলিগলিতেও আজ এ শব্দটির অবাধ বিচরণ। এক কথায়, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দুর্নীতি।

সরকার অনেক ভালো কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এলেও দুর্নীতিবাজদের অপতৎপরতার জালে আটকে যাচ্ছে উন্নয়নের গতি ও প্রকৃতি। এখানে বোধের অপমৃত্যু ঘটেছে। সেই অপমৃত্যুর কবলে পড়েছে সাধারণ মানুষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মাত্রায় অধিষ্ঠিত কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং রাজনীতিক। তবে অভিযোগটি ঢালাওভাবে সবার ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। ব্যতিক্রমও আছে। আর আছে বলেই বাংলাদেশ এখনো মেরুদণ্ড সোজা রেখে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়েই তা প্রমাণ করেছে।

আইন বলছে, বন্দর এলাকায় নদীতীর থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত কোনো জমি সাব-লিজ দেওয়া যাবে না (পোর্ট অ্যাক্ট ১৯০৮)। সম্প্রতি হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে বলেছেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে তুরাগ নদ দখলকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাইকোর্ট তার নির্দেশনামায় বলেছেন, ৩০ দিনের মধ্যে দখলদারীদের সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে তুরাগ নদের অস্তিত্বকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

প্রতিটি সংস্থাই বলছে, নদী রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফলতার কোনো নিদর্শন দেখাতে পারেনি। ঢাকার বেশির ভাগ নদী দেখভালের দায়িত্ব বিআইডব্লিইটিএর। কিন্তু তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করায় হাতছাড়া হয়ে গেছে অনেক জমি।

১৯৫০ সালের স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট (এসএটিএ) অনুসারে নদীর জমির মালিক রাষ্ট্রের জনসাধারণের পক্ষে সর্বদাই সরকার। নদীর জমির শ্রেণি পরিবর্তন যোগ্য নয়, পাশাপাশি বন্দোবস্তযোগ্যও নয়। আদালতও এ আইনের প্রতি সমর্থন রেখে বলেছেন, ‘সরকার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সম্পদ লিজ দিতে পারবে না। সংবিধান অনুযায়ী সরকার বা রাষ্ট্র জনগণের সম্পদ রক্ষা করবে। এর বাইরে যদি কাউকে লিজ দেয়, তবে তা বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।

২০১৩ সালের নদী রক্ষা কমিশন আইনের অধীনে পরের বছর গঠিত হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদীর অবৈধ দখল রোধ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর প্রবাহকে বজায় রাখা এবং দূষণ রোধ করার দায়িত্ব এ কমিশনের। কমিশন তার কাজ শুরু করেছে। তবে কতটা গতিশীল হতে পেরেছে, এ মুহূর্তে অনুমান করা সম্ভব নয়। এখানে জটিলতা অনেক। তবে এ কথাও সত্য, যত জটিলতাই থাকুক না কেন, অসম্ভব নয়।

আমরা দুর্নীতিবাজদের কাছে পরাজিত হতে পারি না। এ মুহূর্তে প্রয়োজন শুধু একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের। সততার সঙ্গে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে নদী তার স্বাধীন সত্তায় ফিরে যেতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নদী রক্ষা,কর্মসূচি,নদী দখল,নদী রক্ষা কমিশন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close