সম্পাদকীয়

  ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

কাউকে না কাউকে নিতে হবে দায়

নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক প্রাণহানির পর প্রায় একই স্থানে একই কারণে আবার যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, তার দায় নেবে কে? এ প্রশ্ন আজ দেশের প্রায় প্রত্যেক মানুষের। দেশের প্রত্যেক মানুষ আজ মনে করছে, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তারা আরো মনে করেন, দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে জবাবদিহির মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। সম্ভবত একইভাবে চিন্তা করছেন হাইকোর্ট।

নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক প্রাণহানির পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদামগুলো না সরানোর মধ্যে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড ঘটায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন আদালত। আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিপূরণ ও নির্দেশনা চেয়ে করা তিনটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বিচারপতি এফ আর এস নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে।

নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতির জন্য রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো চিহ্নিত করে পুরান ঢাকা থেকে সেগুলো সরিয়ে নিতে সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। কিন্তু সে সুপারিশ কোনো কাজে লাগেনি। অনেকের মতে, সুপারিশগুলোকে হিমাগারে রাখার ব্যবস্থা করে ‘কর্তৃপক্ষ’ দিবানিদ্রায় সময় কাটিয়েছে। তাদের নাকের ডগায় বসে অগ্নিকান্ডের জন্য দায়ী বেনিয়ারা গত ৯ বছরে প্রচণ্ড প্রতাপে তাদের কেমিক্যাল বাণিজ্যকে না কমিয়ে দ্বিগুণ করেছে। ফলে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুড়িহাট্টায় প্রাণ দিতে হয়েছে ৬৯ জন নিরীহ মানুষকে।

এদিকে আদালত বলেছেন, নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কমিটি এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশ করেছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে চকবাজারের এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। কিন্তু কেন? জবাবে বলতে হয়, উত্তরটি সবারই জানা থাকলেও পরিত্রাণের জন্য যে শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রয়োজন তা তাদের হাতে নেই। ব্যবসায়ীদের হাত অনেক লম্বা। অর্থ, ক্ষমতা এবং সামাজিক প্রতিপত্তিও অনেক। ব্যবসার পরিমাণও কম নয়, কয়েক হাজার কোটি টাকা। যার একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ কাকের জন্য বরাদ্দ রাখলে সবকিছুই ম্যানেজ করা সম্ভব। সম্ভবত ম্যানেজ সেভাবেই হয়েছে।

এভাবে ম্যানেজ হওয়ার প্রচলিত পদ্ধতির পরিসমাপ্তি হওয়া আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকারকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। জিরো টলারেন্স নীতিই হবে কেমিক্যাল অপসারণের অন্যতম প্রধান অ্যান্টিবায়োটিক এবং এ ক্ষেত্রে সরকারকে তা গ্রহণ করতে হবে। এটাই সময়ের দাবি এবং স্বজনহারা মানুষের একমাত্র চাওয়া।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দায়,সম্পাদকীয়,প্রাণহানি,অগ্নিকাণ্ড,চকবাজারে আগুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close