সম্পাদকীয়

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

রাসায়নিক অপসারণ যেন সফল হয়

যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, পৃথিবীতে শক্তিধর কে? কেন, টাকা! আসলেই এর চেয়ে শক্তিধর কেউ নেই। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অর্থনীতিই হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের মূল চাবিকাঠি। অর্থনীতির চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে বেড়ে ওঠে সে দেশের রাজনীতি। আর রাজনীতির উপরি কাঠামোতে বসবাস করে সে দেশের সংস্কৃতি। অর্থ থেকেই যখন এই অর্থনীতির জন্ম, তখন অর্থের প্রতিপত্তির কথা নতুন করে বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে প্রকাশ, চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির পর টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। বাক্যটি সত্য না মিথ্যা, তা বলে দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। তবে একটি কথা না বললেই নয়, মিডিয়া ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে যাদের চিহ্নিত করেছেন, তারা মানব প্রজাতির কি না সন্দেহ থেকে যায়। কথিত আছে, গণ্ডারের গায়ে কাতুকুতু দিলে তাকে হাসতে দেখা যায় সাত দিন পর। সম্ভবত পুরু চামড়ার জন্য এ ধরনের কৌতুকের জন্ম। কিন্তু উল্লিখিত ‘কর্তৃপক্ষের’ ক্ষেত্রে তো তা হওয়ার কথা নয়। তবে, হয়েছে বলেই এ ধরনের উচ্চারণে বাধ্য হচ্ছেন এ দেশের সাধারণ মানুষ।

তারা বলছেন, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তখন সেই আগুনের লেলিহানে ১২৪ সাধারণ মানুষকে পুড়ে অঙ্গার হতে হয়েছিল। সে সময়ও সরকারের পক্ষ থেকে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। মাঝখানে কেটে গেছে আটটি বছর। কেমিক্যাল অপসারণ তো দূরের কথা, নব উদ্যমে তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। আর এর সবকিছুই হয়েছে ‘কর্তৃপক্ষের’ নাকের ডগার ওপরে। স্বাভাবিক কারণে প্রশ্ন উঠেছে, এ সময় তারা কি ঘুমিয়ে ছিলেন? ঘুমিয়ে না থাকলে গত ২০ ফেব্রুয়ারির রাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো কীভাবে?

আগেই বলেছি, শক্তিধরের নাম টাকা। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের টাকার জোর এতটাই বেশি, তারা সরকারি সেই আদেশ বা নির্দেশনাকে বেড়িবাঁধ দিয়ে আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছেন। আমরা জানি না, সরকার আবার সেই বেড়িবাঁধের সম্মুখীন হবেন কি না। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কেমিক্যাল সরানোর কাজ। তবে এ কাজ লোক দেখানোর পর্যায়ে থেকে যাবে কি না সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দৈ দেখলেও ভয় লাগে।

নিমতলীর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রতিবেদন তৈরি হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কেমিক্যালের কারণেই এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আর সে কারণেই পুরান ঢাকা থেকে সরকার কেমিক্যাল অপসারণের নির্দেশনা দেয়। সে নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে। উপেক্ষিত হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী তার ধৈর্যের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল না সরানো দুঃখজনক। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, ‘বারবার অভিযান পরিচালনা করার পরও এখনো সেখানে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে, যা দুঃখজনক। তবে চকবাজার ট্র্যাজেডি পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম মালিকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। এবার নিশ্চয়ই তারা এসব গুদাম অন্যত্র সরিয়ে নিতে আপত্তি করবেন না।’

আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে গুদাম মালিকদের বোধের দরজা খুলে যাবে। একইসঙ্গে আমরা আরো বলতে চাই, যদি আবার এ নির্দেশনা লঙ্ঘিত হয়, তাহলে সরকারকে এ ক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্সের নীতিকে অনুসরণ করতে হবে। আমরা আরো মনে করি, জিরো টলারেন্সই পারে পুরান ঢাকার এ আগুনকে চিরতরে বিদায় করতে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,রাসায়নিক অপসারণ,চকবাজারে আগুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close