সম্পাদকীয়

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

অগ্নিঝুঁকি বন্ধে চাই জরুরি পদক্ষেপ

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি কক্ষ

ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে এমনিতেই রয়েছে নানা প্রশ্ন। সেই সঙ্গে এবার যুক্ত হলো অগ্নিঝুঁকির বিষয়। গত বৃহস্পতিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকান্ড এমনই একটি সতর্কবার্তা দিয়ে গেছে সবাইকে। যদিও এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অনেক আগেই তাদের সাবধান করে ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। ফলে শত শত রোগীকে এ খামখেয়ালির খেসারত দিতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক অমূল্য সম্পদ।

সংস্থাটির অগ্নিঝুঁকির তালিকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ মোট ২৪৮ হাসপাতালের নাম রয়েছে। এ ছাড়া অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে ১৭৪টি। এ ক্ষেত্রে বাদ যাচ্ছে না সরকারি হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর ভবনও। এ হতাশাজনক বাস্তবতার ফল ইতোমধ্যে মানুষ দেখেছে। এর পরও দ্রুততম সময়ের মধ্যে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যে আশঙ্কা মোটেই অমূলক নয়।

ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতাল ১৫টি। আর বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। তাছাড়া রয়েছে বহু ধরনের ক্লিনিক। এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে প্রতিদিন কয়েক লাখ লোক সেবা নিচ্ছে। এখানে বিশেষায়িত হাসপাতালের সংখ্যা বেশি হওয়ায় রোগীরা ঢাকামুখী হচ্ছে বেশি। হোক সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই রোগীর সংখ্যা কম নেই।

তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে ঢাকা মহানগরীর ২৪৮টি হাসপাতাল এখনো অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুনের ঘটনাটি একটি শিক্ষা হিসেবে উল্লেখ করে জানান, বেশ কিছু হাসপাতাল আছে পুরনো, এগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। সব হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

এ ছাড়া হাসপাতালগুলোর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও তার ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আমরা আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে। কারণ এর সঙ্গে জানমালের নিরাপত্তাসহ সরকারের ভাবমূর্তিও জড়িত। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। সেই বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মতো ঘটনা আর যেন না ঘটে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর রোগীদের কারো সাহায্য ছাড়া নড়াচড়ার ক্ষমতা থাকে না। কাজেই এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলো দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আশাব্যঞ্জক দিক হলো, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। তবে এটি শিগগিরই শুরু করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

পাশাপাশি বিদ্যমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে হাসপাতালগুলোয় অগ্নিনিরাপত্তা উন্নয়নে ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে অগ্নিঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কতর্ৃৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাসপাতাল ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে— এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অগ্নিঝুঁকি,হাসপাতাল,আগুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close