সম্পাদকীয়

  ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯

প্রতিকূলে জলবায়ু

অনুকূল এবং প্রতিকূল। একটি পক্ষে, অন্যটি বিপক্ষে। মানুষ প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে সভ্যতার বিশেষ একটি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে দাঁড়িয়ে সে বলছে, আমরা সভ্য এক পৃথিবীর সদস্য। আসলে ভোগবাদী পৃথিবীর সভ্যতা পৃথিবীকে কতটুকু এগিয়েছে, এ নিয়ে বিতর্ক আছে, ফলাফল যেটুকু আছে, তাকে তার বাহ্যিক বা পোশাকি সভ্যতা বলা যেতে পারে। মানবিকতার উৎকর্ষতায় সম্ভবত আমরা অতীতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি।

একসময় মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ছিল শতভাগ। ক্রমে ক্রমে সেই নির্ভরশীলতাকে মানুষ কমিয়ে এনে এখন প্রকৃতিকে শাসন করতে চাইছে। কিন্তু প্রকৃতি এতটাই স্বাধীন, সে তার ওপর কোনো অন্যায় শাসন বরদাস্ত করে না। প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সেই প্রতিবাদে কোনো কাজ না হলে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সেই বিদ্রোহের কিছুটা হলেও আমরা আঁচ করতে পারছি আমাদের পারিপার্শ্বিকতায়। ভোগের দৌরাত্ম্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর ওপর মানুষ যে আচরণ শুরু করেছে, তা যেকোনো সময়ের সীমা-পরিসীমাকে অতিক্রম করেছে, যা মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য একটি অশনিসংকেত। যেকোনো সময় প্রকৃতি তার নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রতিশোধে এগিয়ে আসতে পারে। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ সেই অশনিসংকেতের ভেতরেই অবস্থান করছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জবাবদিহি-সংক্রান্ত দফতর থেকে ‘জলবায়ু পরিবর্তন : বৈশ্বিক অভিবাসনের সম্ভাব্য প্রভাব চিহ্নিতকরণে সুনির্দিষ্ট কিছু সংস্থার ভূমিকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের অভিবাসী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এতে আরো বলা হয়, ২০১১ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৯৬ ভাগ অভিবাসি তৈরি হবে। তলিয়ে যাবে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। লবণাক্ততা বেড়ে ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সুনির্দিষ্ট সময় পরপর প্রাকৃতিক ধারাবাহিকতায় বদলে যায় জলবায়ু। মানবসৃষ্ট কারণেই এই স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণœ হয়েছে। বিশ্ব বহু দিন থেকে এক আকস্মিক পরিবর্তনের মুখোমুখি। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই প্রমাণ পেয়েছেন, শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী যুগে উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রাকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। উষ্ণায়নের কারণে গলছে হিমবাহের বরফ, উত্তপ্ত হচ্ছে সমুদ্র, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ঋতুচক্র।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একেবারেই সামনের কাতারে। সুতরাং এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে ভাবার সময় এসেছে। প্রকৃতির ওপর সব ধরনের নিপীড়ন শূন্যমাত্রায় কমিয়ে এনে একে মাতৃসেবার মানসিকতা দিয়ে লালন করতে হবে। অন্যথায় এ দেশ-মাটি ও মানুষ অচিরেই অতল সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। আর এই তলিয়ে যাওয়া থেকে মুক্তির একটাই পথ, ‘মাত্রাতিরিক্ত ভোগবাদী চিন্তা ও চেতনা থেকে বেরিয়ে আসা’।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জলবায়ু,সম্পাদকীয়,প্রতিকূল
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close