সম্পাদকীয়

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯

অযৌক্তিক ফি বন্ধে চাই কার্যকর উদ্যোগ

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে বরাবরই সচেষ্ট সরকার। একের পর এক নিচ্ছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। যেমন : প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই সরবরাহ, বছরের শুরুতে শিক্ষাপঞ্জি শুরু, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান। মূলত এসব উদ্যোগের কারণে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি প্রাথমিক থেকে শুরু করে শিক্ষার অন্যান্য স্তরেও পাসের হার বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের এসব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে কতিপয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে রাজধানীর নামকরা স্কুলগুলোয় নানা অজুহাতে দ্বিগুণ হারে ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে। এ অবস্থায় জিম্মি হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে দেশের নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভর্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি নিশ্চয়ই নিয়মবহির্ভূত এবং অন্যায় কাজ। আমি আশা করব বিদ্যালয়ে যে নিয়ম বেঁধে দেওয়া আছে, সে নিয়ম মেনে তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করবেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্কুলগুলোয় চলছে লাগামহীন ভর্তিবাণিজ্য।

মনে রাখতে হবে, শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক মাধ্যম নয়। তারপরও মানসম্মত স্কুলের অভাবে শিক্ষাকে অনেকটাই বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে রাজধানীর ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার নামে অনেকেই শিক্ষা-বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছেন। এ অবস্থায় সরকারের উচিত জরুরিভাবে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘নানা অজুহাতে বাড়তি ফি, জিম্মি অভিভাবকরা’ শীর্ষক বিশেষ একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা না মেনে নিজেদের ইচ্ছামতো ফি আদায় করছে। উপায়ন্তর না দেখে বাধ্য হয়ে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করে সন্তানকে ভর্তি করছেন অভিভাবকরা। এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা খোঁড়া যুক্তি দিয়ে বলছেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি অর্থ নেওয়া হচ্ছে। আবার এটিকে অন্যায় মানতেও নারাজ তারা। গত নভেম্বর থেকে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। লটারি ও ভর্তি পরীক্ষার পর্ব শেষে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ যাতে ইচ্ছেমতো বাড়তি ফি আদায় না করতে পারে, সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। যাতে ভর্তির এ সময়টাতে কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।

নতুন শিক্ষাবর্ষে ভতির সময় ও এসএসসির পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়টাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি অর্থ আদায়ের একটা সুযোগ খোঁজে। সরকারের কোনো আদেশ-নির্দেশ তাদের নিবৃত্ত করতে পারে না। কিন্তু দেশে আইনকানুন আছে, এ কথা তাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমরা চাই, স্কুল কর্তৃপক্ষ যাতে ইচ্ছেমতো বাড়তি ফি আদায় না করতে পারে, তার জন্য তদারকি। বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে সরকার আরো কঠোর হোক। কারণ, সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিধিবদ্ধভাবে পরিচালনা যেকোনোভাবে সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফি,সম্পাদকীয়,শিক্ষাব্যবস্থা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close