সম্পাদকীয়

  ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

আত্মহত্যা প্রবণতা রোধ করতে হবে

বেঁচে থাকতে কে না চায়? সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কী প্রাণান্তকর চেষ্টা করে প্রতিটি মানুষ। সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনাকে সঙ্গী করে অনেকেই ছুটে যায় নতুন জীবনের আশায়। কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা এ দৃশ্যে ছেদ পড়তেও দেখি, বর্তমানে আপনজনদের মমতার বন্ধন ও সুখী জীবনের স্বপ্ন ত্যাগ করে এক শ্রেণির মানুষ ক্রমবর্ধমান হারে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছে।

বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, যা দেশ-বিদেশে সর্বত্রই গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার সামাজিক উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে কাউন্সিলিংয়ের পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও একেক দেশে এ সমস্যার একেক চিত্র। তবে বাংলাদেশেও যত দ্রুত সম্ভব এ জাতীয় উদ্যোগের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমানে দেশের ১৮ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে ভুগছে। শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসচেতনতা এবং বিশেষ মুহূর্তে তাদের চাহিদা ও প্রবণতার প্রতি বেখেয়াল থাকার কারণে কারো কারো মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য, সৃজনশীলতা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের দেওয়া এক তথ্যে জানা যায়, গত ১১ মাসে বাংলাদেশে ২৯৩ শিশু আত্মহত্যা করেছে এবং আরো ২২ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০১৩ জন আর ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০১৮ সালের অর্ধেক। সম্প্রতি রাজধানী ভিকারুননিসা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যা একটি নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর তা হলো শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিশু-কিশোরদের মনোদৈহিক অবস্থা এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচ্ছন্ন ভূমিকা যেন প্রায় একই বৃত্তে গাথা। তা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে।

এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি কিশোর-তরুণদের আসক্তি এই প্রজন্মের মধ্যে অবাস্তব কল্পনা, হতাশা ও আত্মহত্যাপ্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া কিছু গেইম এবং অ্যাপে কিশোর-কিশোরীদের সরাসরি আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করতেও দেখা গেছে। এসব বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা কারিকুলামপ্রণেতাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে।

লন্ডনের কিংস কলেজের একটি গবেষণায় দেখা গেছে। কিশোর-কিশোরীরা আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠার পেছনে আরো বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখযোগ্য, যেমন কিশোর-কিশোরীদের অবহেলা, কটূক্তি, পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়ন। আমাদের দেশও যে এসব থেকে মুক্ত তা অন্তত বলা যাবে না। ফলে যেভাবেই হোক সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্মম এই প্রবণতা রোধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। বরং এর মধ্য দিয়ে শুধু একটি জীবনের অস্বাভাবিক পরিসমাপ্তি ঘটে, পাশাপাশি একটি পরিবারের স্বপ্নেরও অপমৃত্যু ঘটে। তাই এই কাপুরুষোচিত মানসিকতা ত্যাগ করে কিশোর-তরুণ সবারই উচিত, সমস্যা যত প্রকটই হোক, তা বীরদর্পে মোকাবিলার চেষ্টা করতে হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আত্মহত্যা,আত্মহত্যা প্রবণতা,কিশোর-কিশোরী,আত্মহত্যাপ্রবণ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close