সম্পাদকীয়

  ২৫ নভেম্বর, ২০১৮

ঐতিহ্যের সুন্দরবন হারাচ্ছে ঐতিহ্য

অরণ্যকে বলা হয় প্রকৃতির আদরের সন্তান। আর এ আদরের সন্তান প্রকৃতির প্রধান রক্ষক। সেই রক্ষক যখন নিরাপত্তাহীনতায় মুখোমুখি হয়, তখন প্রকৃতিও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কেবল প্রকৃতিই নয়—পুরো বিশ্বই আজ নিরাপত্তাহীনতার চাদরে আবৃত। আমরা প্রকৃতির এই আদরের সন্তানকে অনাদরে ঠেলে দিয়েছি এক মহাদুর্ভিক্ষে। সে যেন আজ নিজেই দুর্ভিক্ষ-প্রপীড়িত ইথিওপিয়ার মানব সন্তান হয়ে তাকিয়ে আছে গ্যালাক্সির শূন্যতায়। বাংলাদেশও এই নিরাপত্তাহীনতার বাইরে থাকতে পারেনি। পৃথিবীর ঐতিহ্যবাহী ম্যানগ্রোভ তার সব সৌন্দর্য হারিয়ে আজ কংকালসার দেহে পরিণত হতে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সুন্দরবনের প্রায় ২৭ প্রজাতির মাছ। এর অন্যতম প্রধান কারণ ওই এলাকার পানি ও মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি। আর এই লবণাক্ততা ফি বছর বেড়েই চলেছে। লবণাক্ততা বাড়ার কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে মিঠাপানির মাছের ওপরও। শূন্য থেকে পাঁচ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এই ২৭ প্রজাতির মাছ। মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে এসব মাছ থাকতে পারছে না সুন্দরবন এলাকায়। অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থাৎ মাছের পরিমাণ দ্রুত কমে আসছে সুন্দরবনে। ইতোমধ্যেই ৩০ শতাংশ মাছ হারিয়ে গেছে বিশ্বসেরা ম্যানগ্রোভ এলাকা থেকে। লবণাক্ততা এখনো পাঁচ পিপিতে উঠেনি। এখানে পৌঁছালে এসব মাছের আর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে অভিমত দিয়েছেন পরিবেশবাদী বিশেষজ্ঞরা।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই লবণাক্ততার আগ্রাসন। জবাবে বলা যায়, আমাদের নদ-নদীগুলোর প্রবাহ দিন দিন নিম্নমুখিতার দিকে। যার কারণে সাগর থেকে লবণাক্ততা ওপরের দিকে উঠে আসছে। এ ছাড়া বৈরী জলবায়ুর কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উজানের দিকে ধেয়ে আসছে লবণাক্ততা। আর এই লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে।

এই লবণাক্ততা কমানো একটি কঠিন কাজ। তবে, নিরাময় অযোগ্য নয়। এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন দেশপ্রেম। আর এই দেশপ্রেমই পারে এ রোগের নিরাময় এনে দিতে। এ জন্য রাজনীতির নেতৃত্বকে সততার সঙ্গে এগিয়ে এসে হাল ধরতে হবে এবং একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সেই কাতারে এসে শামিল হতে হবে।

আমরা মনে করি, প্রথমত ও দ্বিতীয়ত দেশের প্রতিটি নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হবে প্রতি ইঞ্চি ভূমিতে বৃক্ষরোপণ করা এবং একই সঙ্গে বৃক্ষ নিধন থেকে নিজেকে সরিয়ে আনা। ফলাফলে আমরা পাব একটি সবুজ বাংলাদেশ। রক্ষা পাবে লবণাক্ততা। রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রকৃতির প্রিয় সন্তান এবং বিস্তীর্ণ জনপদ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঐতিহ্য,সুন্দরবন,সম্পাদকীয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close