সম্পাদকীয়

  ২৪ নভেম্বর, ২০১৮

ম্রো পরিবারে আতঙ্ক

একেই বলে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। একে তো নিঃস্ব, তারপর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। দুর্গম পাহাড়ে এদের বসবাস। ভূমিদস্যুর কবলে পড়ে লামার ১৫২ ম্রো পরিবার আজ বেঁচে থাকার অন্য উপায় খুঁজছে। কিন্তু উপায়টা কী? তাদের জন্য এখন একটি পথই খোলা। দেশান্তরী হওয়া ছাড়া তাদের জন্য আর কোনো পথ খোলা আছে বলে কারো জানা নেই। অনিশ্চয়তার মধ্যে জন্ম, অনিশ্চয়তার মধ্যে পথচলা আর পরিশেষে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে হেঁটে যাওয়া।

পাড়ার নাম লক্ষণঝিরি মুরংপাড়া। লামা সদর থেকে পোপা মৌজার এ গ্রামটিতে হাঁটাপথে লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লাগে দুই ঘণ্টা। এখানে ১০ পরিবারের বাস। কাছাকাছি সাতটি পাড়া। এই সাতটি পাড়ায় এদের বসতি। মৌজাটির ৯৫ ভাগ ম্রোই বংশ পরম্পরায় জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল এবং এখানেই জুম চাষ করে বেঁচে আছে বংশ পরম্পরায়।

জুমের জায়গা না থাকলে উৎপাদন নেই। উৎপাদন না থাকলে নিরম্বু উপবাসে থেকে মৃত্যুকে অবগাহন করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। ক্ষতিগ্রস্তরা বলেছেন, ভূমি দখলদারিরা জুম চাষের জমি জবরদখল করে তাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই তারা দখলকৃত অঞ্চলের গাছপালা কেটে জমি দখলে নিয়েছে। এলাকা থেকে জ্বালানি সংগ্রহেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। দখলদারিরা প্রায় ৫০০ একর জমির খণ্ড খণ্ড জায়গায় জঙ্গল কেটে তাদের রাজত্ব কায়েমের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।

তারা বলেছে, দখলদারির লোকজন তাদের ভয়ভীতি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এ কাজ করছে। একই সঙ্গে মামলা ও পুলিশের ভয়ও দেখানো হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এ সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। না কোনো সমাজকর্মী, না সরকার।

তাদের অভিযোগ, এই উচ্ছেদের মূলে রয়েছেন রবিউল হোসেন ভূঁইয়া। সঙ্গে রয়েছেন মেরেডিয়ান কামাল নামে পরিচিত লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক কামালউদ্দিন ও মোস্তফা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী শফিক উদ্দিন আহম্মদ। তবে দখলদারদের দাবি, তারা ম্রোদের কাছ থেকে এ জমি ক্রয়সূত্রে মালিক হয়েছেন। তাদের কেনা জায়গাতেই জঙ্গল কেটেছে শ্রমিকরা। অন্য কোনো জায়গায় হাত দেওয়া হয়নি। এখানে প্রশ্ন উত্থাপিত হতেই পারে। দুই পক্ষের অভিযোগ এবং পাল্টা বক্তব্যের একটি সত্য এবং অন্যটি মিথ্যা। এ ক্ষেত্রে কে সত্য বলছেন, তা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের।

ভুক্তভোগীদের দাবি, তারা স্থানীয় জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। নির্বাহী কর্মকর্তা, লামা থানা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় ভূমি ও ভূমিসংক্রান্ত আবেদন করেও কোনো সাহায্য পাননি। তবে লামা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিক আশ্বাস পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

আমরা মনে করি, বিষয়টি দখলদারদের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ না হলেও ১৫২ পরিবারের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা। আমরা এ সমস্যার দ্রুত ও ন্যায়সংগত বিচারের দাবি করছি।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভূমিদস্যু,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী,ম্রো পরিবার
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close