সম্পাদকীয়

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৮

অর্থ পাচাররোধে ব্যবস্থা নিতে হবে

এ দেশে অর্থ পাচার একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। একটি ব্যাধিও বলা যায়। এ রোগের হাত থেকে মুক্তির কোনো ইতিবাচক নিদর্শন এখনো খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ। তাই ক্ষতের সংখ্যা এবং পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলেই এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে দেশীয় অর্থনীতিতে। শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানি বেড়েছে ব্যাপকভাবে, যা এ দেশের সচেতন মানুষকে কিছুটা হলেও শঙ্কিত করেছে।

এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ভালো। পরিসংখ্যান হিসাব মতে, বিনিয়োগে চাঙাভাব বিরাজ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তুলনামূলক বিচারে নতুন শিল্প স্থাপন নেই বললেই চলে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ চিত্রটাও আশাব্যঞ্জক নয়। শিল্প স্থাপনের নামে কোটি কোটি ডলারের এলসি খোলা হলেও বিনিয়োগ চোখে পড়ছে না। এলসি আছে, বিনিয়োগ নেই।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী বছরে অর্থ পাচার বাড়ে। বেশির ভাগ দেশেই কমবেশি এ প্রবণতা আছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা সীমাকে লঙ্ঘন করেছে। তারা মনে করেন, সম্প্রতি শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় বিনিয়োগকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশ থেকে অর্থ পাচারের কথা বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি অর্থ পাচার-সংক্রান্ত ৩২টি ঘটনার অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এখানেই শেষ নয়। রফতানি না করেও এর বিপরীতে শত শত কোটি টাকা সহায়তা নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এখানে না বললেই নয় যে, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। নড়েচড়ে বসার কোনো লক্ষণও নেই। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) বলেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার ঊর্ধ্বমুখী। শীর্ষ ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম। এনবিআরের মতে, উচ্চ কর হারের কারণে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি-রফতানির ব্ল্যাকহোলের মধ্য দিয়ে বিপুল অর্থ পাচার হচ্ছে।

আমরা মনে করি, আশানুরূপ বিনিয়োগ না হলেও মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি থেমে নেই। আর সে কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, ‘ব্ল্যাকহোলের মধ্য দিয়ে কত টাকা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে’! বিশেষজ্ঞসহ অনেকের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ এ কাজে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থার দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা বিষয়টি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, যা কোনো রাষ্ট্র বা জাতির জন্য শুভ হতে পারে না।

আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গোয়েন্দা সংস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের বলতে পারি, আপনারা এ রোগ থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য হাইপাওয়ার্ড অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন। আমরা সময়ের দাবির কথা জানালাম। আশা করি, এ দাবির কথা স্মরণে রেখে সংস্থাগুলো রোগ নির্মূলে এগিয়ে আসবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অর্থ পাচার,মানি লন্ডারিং,আর্থিক খাত,বিনিয়োগ,ব্যাংক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close