সম্পাদকীয়

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৮

থমকে গেছে প্রত্যাবাসন

নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কিছুটা হলেও স্থবিরতার মুখে পড়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগে তাদের ফেরত পাঠালে মিয়ানমারের এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন পুনরায় ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিশনের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, শরণার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠানো হলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। তবে তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা এ মুহূর্তে স্বেচ্ছায় তাদের নিজভূমে ফিরে যেতে চাইছে না। তাই প্রথম দিনের তালিকায় থাকা সবাইকে রাখাইনে পাঠানো যাবে কি না—সে প্রশ্নে শেষ মুহূর্তে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তির ভিত্তিতেই এ প্রত্যাবাসন। দুই দেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২২৬০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। প্রতিদিন ১৫০ জন করে ১৫ দিনে প্রথম ধাপের এ প্রত্যাবাসন শেষ হবে। কিন্তু জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি না হলে ফেরত পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ হবে এবং সেখানে পরিবেশ এখনো বসবাসের অনুকূল নয়।

গত বছর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও নানা কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত মাসে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মধ্য নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার বলা হয়, রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এখনো তাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত মিয়ানমার সরকার গ্রহণ করেনি। সেখানে রোহিঙ্গাদের চলাফেরার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি।

এদিকে জাতিসংঘের তথ্যমতে, ১ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা এখন রাখাইনে সরকারি আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা। এই জনগোষ্ঠী এখনো চলাফেরা ও অন্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমতাবস্থায় জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ সরকার ফেরত পাঠাবে।

আমরা মনে করি, জাতিসংঘের এই পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত মানবতার পক্ষে একটি ঘোষণা। বাংলাদেশ সরকার সেই ঘোষণাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে বলেছে, এ রকম অবস্থায় তারা রোহিঙ্গাদের কোনো পরিকল্পিত বদ্ধভূমিতে ঠেলে দেবে না। সরকার পর্যবেক্ষণ দল পাঠিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করবে। বাংলাদেশ সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলতে হয়, ‘জয় মানবতার জয়’।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা,প্রত্যাবাসন,শরণার্থী,সম্পাদকীয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close