সম্পাদকীয়

  ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

দৃশ্যদূষণে ঢাকা

এমনিতেই ঢাকা মহানগর একটি দূষণ নগরী হিসেবে পরিচিত। শীর্ষ তিনটি দূষিত নগরীর মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান। এ সমস্যা যদি কোনো রোগ হয়, তাহলে এ রোগ কোনো নতুন রোগ নয়। অনেকদিন ধরেই এ রোগে ভুগছে ঢাকা মহানগর। রোগ সারানোর প্রশ্নে চেষ্টা কম হয়নি। তবে রোগ সারেনি। ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে বৈকী। দূষণ-সমৃদ্ধ এই নগরীর রোগের সংখ্যা না কমলেও যুক্ত হয়েছে আরো একটি। যে রোগের নাম দৃশ্যদূষণ। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজ থেকে শুরু করে ফ্লাইওভার, অলিগলি থেকে রাজপথ, আবাসিক দেয়াল থেকে যেকোনো দেয়াল—কোথাও এক চিলতে জায়গা নেই, যেখানে ব্যানার-পোস্টার লাগানো হয়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মহাখালী আঞ্চলিক অফিসে ঢুকতেই গেটের দুই পাশে পোস্টার-ব্যানারে সয়লাব হয়ে আছে। দেয়ালে একটার ওপরে একটা পোস্টার যেন জমি দখলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অধিকাংশ পোস্টারই এমপি পদপ্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার। পোস্টারের কবল থেকে বাদ যায়নি খোদ সিটি করপোরেশন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তবতা এটাই। যে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো নগরকে পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর রাখা, সেই প্রতিষ্ঠানের সর্বাঙ্গ যদি অপরিচ্ছন্নতার চাদরে ঢাকা থাকে, তাহলে শহরকে সুন্দর রাখবে কে!

নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকায় চলছে দৃশ্যদূষণের অপ্রতিরোধ্য প্রতিযোগিতা। এ ছাড়াও এলাকা বিশেষে রয়েছে ভর্তি কোচিংয়ের বিলবোর্ড ও পোস্টার। পোস্টারের হাত থেকে রেহাই পায়নি বৈদ্যুতিক ও টেলিফোন তারের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাও। এসব বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টার অপসারণে মাঝেমধ্যে দুই সিটি করপোরেশন অভিযান চালালেও তা কখনো সাফল্য আনতে পারেনি। চলমান সময়ে কারওয়ান বাজার এলাকার যেদিকে চোখ যায়, এসব পোস্টারকে যেন বাদুড় ঝোলা হয়ে ঝুলতে দেখা যায় বৈদ্যুতিক অথবা টেলিফোন তারে। এ ছাড়াও রয়েছে পুরনো দৃশ্যদূষণ। রাস্তার দুই পাশে তাকালে চোখে পড়ে কাঁচাবাজারের উচ্ছিষ্ট পচা অংশ, ড্রেনের পাশে তুলে রাখা ময়লার স্তূপ, ইট-কাঠ-রডসহ বাড়ি নির্মাণসামগ্রীর নানাবিধ জিনিসপত্র। তাই দৃশ্যদূষণের পরিধিও বাড়ছে। প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে প্রবণতাও। খোলা সবুজ পরিবেশ দেখার পরিবর্তে দৃশ্যদূষণে ভুগছে রাজধানীবাসী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মেধা ও মননে দেশপ্রেমের অবস্থান সংকুচিত হলে সব ধরনের দূষণের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে সম্ভবত সে রকম কোনো ঘটনাই ঘটেছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে দূষণমুক্ত নেতৃত্ব। স্কুলশিক্ষক থেকে শুরু করে সব সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিবর্গকে তাদের চেতনায় দেশপ্রেম রোপণ করেই নেতৃত্ব দেওয়ার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা মরহুম মেয়র আনিসুল হকের দৃষ্টান্তকে প্রতিস্থাপন করতে পারি।

আমরা মনে করি, সমাজের সবস্তরে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিবর্গ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততার সঙ্গে এগিয়ে আসবেন এবং তাদের অনুসরণ করে আমরাও সাধারণ মানুষরা সেই পথে ধাবিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত হওয়ার সুয়োগ পাব। রাজধানীসহ গোটা সমাজ দূষণমুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঢাকা,দূষণ,সম্পাদকীয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close