সম্পাদকীয়

  ২০ অক্টোবর, ২০১৮

বৈষম্যের ব্যবধান কমাতে হবে

রাজস্ব আয় বেড়েছে। পাশাপাশি ঋণনির্ভরতাও কমেছে। সংবাদটি আমাদের সবার জন্য শুভ। কর দেওয়ার প্রশ্নে আগে যে অজ্ঞতা বা ভীতি ছিল, তা অনেকটা আজ আর নেই। কর দেওয়ার প্রশ্নে মানুষ তুলনামূলক বিচারে এখন অনেকটা সজাগ। আর সে কারণেই সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, রাজস্ব আহরণ প্রতি বছর গড়ে ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ হারে বেড়েছে গত ৬ বছর।

২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বলেছে, রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি করদাতার সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা ৩৬ লাখ অতিক্রম করেছে। সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যায়, মানুষের আয় বেড়েছে। বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা। বেড়েছে ভোগের মাত্রা। তবে বাড়েনি কিছু কিছু শিল্পশ্রমিকের মজুরি; যাদের রক্ত, ঘাম এবং শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে রাজস্ব বোর্ডের এই উল্লম্ফ, তাদের শরীরে লাগেনি এক চিলতে উন্নয়নের ঝলক।

২০১৩ সালের মজুরি বোর্ডের তথ্য মতে, ট্যানারি শ্রমিকদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৮০০ টাকা। জাহাজভাঙা শিল্পে ১৬ হাজার এবং ওষুধশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৫০ টাকা। সেখানে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা পান মাত্র ৫ হাজার ৩০০ টাকা। অথচ, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে তৈরি পোশাকশিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮৩ শতাংশের অংশীদার এই শিল্প।

তাই এ শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তুলনামূলক বিচারে কোনোভাবেই ন্যায়সংগত বলে বিবেচিত হতে পারে না। এতে শ্রমিকরা হিনম্মন্যতায় ভোগে এবং এই হিনম্মন্যতার কারণে তাদের কাজের গতি কমে আসে বলে মনে করেন সমাজ বিশ্লেষকরা। আমাদের মনে রাখাটা জরুরি, হিনম্মন্যতা এমন একটি রোগ যা মানুষকে তার প্রতিটি কাজে অমনোযোগী করে তোলে। তাই এ শিল্পের শ্রমিকদের সবচেয়ে কম মজুরি পাওয়ার হিসাবটা কোনোক্রমেই সুখকর হতে পারে না।

সিডিপির এক গবেষণায় বলা হয়, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকার ওপরে হওয়া উচিত। অক্সফাম বলেছে, বাংলাদেশে একজন সাধারণ মানুষকে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রয়োজন ২৫২ ডলার সমান অর্থ। আইএলও জানিয়েছে, ২৫২ ডলার তো অনেক দূরে। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী চীনে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৫৫ ডলার, কম্বোডিয়ায় ১২৮ ডলার, ভিয়েতনামে ১০০ ডলার, পাকিস্তানে ৯৯ ডলার, ভারতে ৭৮ ডলার।

আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশের শ্রমিকরা পান মাত্র ৬৮ ডলার। এ বৈষম্যের একটা সু-সমাধান হওয়া আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা মনে করি, রাজস্বকে আরো ব্যাপক বৃদ্ধি, সম্প্রসারিত, পরিমার্জিত, ও পরিশীলিত করার লক্ষ্যেই আয় বৈষম্যকে নামিয়ে এনে একটি গ্রহণীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজস্ব আয়,বৈষম্য,ঋণনির্ভরতা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close