সম্পাদকীয়

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কোটা রাখা না রাখা...

কোটা রাখা না রাখার দ্বন্দ্বে কিছু সময় পার করেছে বাংলাদেশ। এর মাঝে আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখেছি, গ্রেফতার দেখেছি। রিমান্ডে নেওয়ার মতো ঘটনাও পর্যবেক্ষণ করেছি। সরকার এবং বিরোধী পক্ষের নেতাদের উচ্চারিত পঙ্তিমালাও শুনেছি। শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি পবিত্র উচ্চারণে বলেছিলেন, ‘কোটা পদ্ধতি যেহেতু অযৌক্তিক, সেহেতু কোটা পদ্ধতি থাকারই প্রয়োজন নেই। আমি কোটা পদ্ধতি তুলে দিলাম। আন্দোলন যথেষ্ট হয়েছে। এবার তারা ক্লাসে ফিরে যাক।’

তারা ক্লাসে ফিরে যাননি। আন্দোলন করেছেন। বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। তবে তাদের কোনো ফলাফল নিয়ে ঘরে ফিরতে দেখা যায়নি। ফলাফল হাতে নিয়ে ঘরে ফিরতে দেখা না গেলেও আন্দোলনকে নেতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত না করেই বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী তার কথা রেখেছেন এবং তার মহানুভবতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জয়ী করেছেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের বেশির ভাগ সদস্য। কথা দিয়ে কথা না রাখার দেশে প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করলেন তিনি ওই গোত্রের নন। শুধু এবারই নয়, এ নিয়ে অনেকবারই তিনি কথা দিয়ে কথা রাখার উপমা তৈরি করেছেন। সরকারি চাকরির নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে কোনো ধরনের কোটা না রেখে মেধাভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছে কোটা পর্যালোচনায় গঠিত ‘উচ্চপর্যায়ের কমিটি’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যে প্রাথমিক নিয়োগ হয়; সেখানে কোনো কোটা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে আগামী মাসেই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হতে পারে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কমিটির এই সুপারিশকে ইতিবাচক বললেও পাশাপাশি এও বলেছেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা মনে করি, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উচ্চারিত শব্দাবলির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশ ও দশের মঙ্গল। সেই সঙ্গে একটি কথা না বললেই নয় যে, আন্দোলনকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য নান্দনিক সংস্কৃতির সংযোজন প্রয়োজন। আমাদের দেশের যার খুব অভাবে রয়েছে। এ মুহূর্তে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি কিছুদিনের জন্য হলেও স্থগিত করে প্রধানমন্ত্রীর দেয় প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা স্থাপন করা। কোটা আন্দোলন এমন কোনো আন্দোলন নয় যে, এ মুহূর্তে থেমে গেলে তা আর কোনো দিন গতি পাবে না। আমরা যদি আমাদের (বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের) আচরণের ক্ষেত্রে নান্দনিকতার উদাহরণ তৈরি করতে না পারি; তাহলে তা হবে দুঃখজনক। আশা করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অনুধাবন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন—এটাই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,কোটা,সরকারি চাকরি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close