সম্পাদকীয়
গণহত্যার বিচার চায় জাতিসংঘ
রাখাইনে যে গণহত্যা হয়েছে, নতুন করে আর কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই। জাতিসংঘই বলেছে, এ হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমার সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ ছয় জেনারেলের বিচার দাবি করেছে জাতিসংঘ। আর এর মধ্য দিয়েই বিশ্ব দরবারে আজ প্রমাণিত সত্য এই যে, মিয়ানমারের ক্ষুদ্রতম মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটি থেকে সমূলে উৎখাত করার লক্ষ্যেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী এ গণহত্যা চালিয়েছে।
রোহিঙ্গা নিধনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তোলারও সুপারিশ করেছে বৈশ্বিক সংস্থাটি। গণহত্যা বন্ধে ব্যর্থতা ও নিধনযজ্ঞের সত্যতাকে অস্বীকার করার দায়ে অং সান সু চিরও কঠোর সমালোচনা করা হয়। রোহিঙ্গা নির্যাতনবিষয়ক জাতিসংঘ গঠিত একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গত সোমবার প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উত্থাপন করে। সম্ভবত বিশ্ব সংস্থার পক্ষ থেকে এটাই সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও হত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া; যা সমস্যা সমাধানের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের হত্যার লক্ষ্যেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী এ অভিযান পরিচালনা করেছে। এখানে যে গণহত্যা হয়েছে তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লিখিত হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, এ হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সু চির সরকারেরও ভূমিকা রয়েছে। রোহিঙ্গারা আমৃত্যু নিপীড়নের শিকারে পরিণত করা হয়েছে।’ মানবতাবাদী এ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ এবং বিশ্ব মানবতার পক্ষ থেকে বিশ্বসংস্থাকে সাধুবাদ।
আমরা আশা করব, আগামীতে বিশ্বসংস্থা আরো কঠোর পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে। একইসঙ্গে একটি কথা না বললেই নয়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের ভূমিকাও কম নয়। যদিও বাহ্যিকভাবে চোখে পড়ার মতো তেমন অগ্রগতি নেই। তবুও বলতে হয় সরকারের সাফল্য কম নয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিপক্ষে আজ যে জোরালো অবস্থান তৈরি হয়েছে তার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের ইতিবাচক কূটনৈতিক তৎপরতা। আমরা এ তৎপরতাকে আরো গতিশীল দেখতে আগ্রহী।
বিষয়টিকে জটিল করে তোলার প্রশ্নে পর্যবেক্ষকরা দুই পরাশক্তিকে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, চীন রোহিঙ্গা সংকটের প্রথম থেকেই মিয়ানমারকে রক্ষা করে আসছে। রাশিয়াও এ সংকটে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই মিয়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। সুতরাং, এই দুই দেশকে বিশেষ বিবেচনায় এনে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধিসহ আরো সুসংহত করে বাংলাদেশকে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, সরকার তা পারবে। কেননা, এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো বৈরিতা নেই। আছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ সম্পর্ক আরো দৃঢ হোক—এটাই প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল