সম্পাদকীয়
সন্ত্রাসের শেষ কোথায়
সন্ত্রাসের মাত্রা কীভাবে কমছে তা আমাদের জানা নেই। তবে এর পরিধি যে দেশের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে তা প্রমাণ করার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণের প্রয়োজন নেই। মাদকের ওপর সরকার তাদের জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও একই বাক্য উচ্চারিত হয়েছে।
চাঁদাবাজ ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমরা সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ব্যাপারেও সরকারের অবস্থান আমরা জানি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা লক্ষ করা গেলেও নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে সরকারের সফলতার তেমন কোনো নিদর্শন এখনো আমরা পাইনি। পাইনি বলেই প্রকাশ্য রাজপথে নারীদের নির্যাতিত হতে দেখা যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাসের কুমারজানী এলাকায় চলমান বাসের ভেতরে কতিপয় দুর্বৃত্ত শিউলী বেগমের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ সময় নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে একপর্যায়ে বাস থেকে লাফিয়ে পড়লে ওই বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই শিউলী বেগম মারা যান।
শিউলী একজন পোশাকশ্রমিক। প্রতিদিনের ন্যায় সকাল ৭টায় তিনি কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বাসে ওঠেন। আর সেই বাসের ভেতরেই ফিল্মি কায়দায় সন্ত্রাসীরা শিউলীর ওপর হামলে পড়ে। তখন তার সম্ভ্রম রক্ষার্থে কেউ এগিয়ে আসেনি। আসেনি বলেই শেষ পর্যন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে রক্ষার শেষ চেষ্টা করেও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। শিউলীর এ মৃত্যু জাতির মুখের ওপর কি পরিমাণ থুতু নিক্ষেপ করেছে তা আমাদের জানা নেই।
তবে আমরা যেটুকু জেনেছি, দুর্বৃত্তের সকলেই নিরাপদে আছে। তাদের কাউকেই শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এমনকি বিশালাকৃতির বাসটিও গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছে।
এলাকাবাসীদের মতে, এর কোনো বিচার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে একটা দফারফা হতে পারে। অর্থাৎ পুলিশের মধ্যস্থতায় একটি মীমাংসা। যে মীমাংসায় কিছু জরিমানার টাকা শিউলীর স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। যারা মীমাংসা করবেন তারাও কিছু ভাগ পেতে পারেন। কিন্তু লজ্জাকে বাঁচাতে গিয়ে যে মেয়েটি জীবন বিসর্জন দিল তার ভাগে অসহায়ের মতো পড়ে রইল ১৬ কোটি মানুষের লজ্জা এবং যূথবদ্ধ ব্যর্থতা। কোনো সুসভ্য জাতির পক্ষে এ ব্যর্থতা লজ্জাহরণের চেয়েও লজ্জাজনক ঘটনা।
আমরা মনে করি, এ ঘটনার একটি সত্যনিষ্ঠ তদন্তের মধ্য দিয়ে দোষীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকার্য সম্পাদন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই আমাদের প্রত্যাশা।
পিডিএসও/তাজ