সংকুচিত হচ্ছে রাজপথ
‘সংকুচিত’। একটি ঋণাত্মক শব্দ। যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে শব্দটির অনুপ্রবেশ ঘটলে নেতিবাচক ফলাফলের মুখোমুখি হতে হবে। এটাই বাস্তব চিত্র। সমাজের সবস্তরে এর প্রতিফলন সব সময়ই চোখে পড়ছে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশ ও জাতিরাষ্ট্রে। বোধের দরোজা যখন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম হতে থাকে অর্থাৎ সংকুচিত হতে থাকে; তখন সমাজের সবকিছুই সংকুচিত হয়ে পড়ে। ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে শুয়ে থাকে অবক্ষয়ের সাজানো কফিনে। লুটেরা পুঁজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে সাজানো সমাজে এটাই স্বাভাবিক। আর সে কারণেই খোদ রাজধানীতে অবৈধ কার পার্কিং বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। হয়নি বলেই ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে রাজপথ। বাড়ছে যানজট।
আমরা সেই চিকিৎসককে পাব কোথায়? যিনি অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করে তুলবেন গোটা সমাজকে! আমরা মনে করি, চিকিৎসক আমাদের আছে। প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের
রাজপথকে সংকুচিত করার জন্য কার পার্কিংকে এককভাবে দায়ী করাটাও হবে গুরুতর অন্যায়। ঢাকা শহরে এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে উন্নয়নের নামে খননকর্ম হচ্ছে না। আর এই খননের আওতায় পড়ে শুধু রাজপথই যে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে তাও নয়, ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সংকুচিত হচ্ছে তাদের মন ও মানসিকতা। বছরজুড়েই চলে এই অপতৎপরতা। মহানগরীর উন্নয়ন তৎপরতায় যে প্রতিষ্ঠানসমূহ জড়িত, মূলত এদের বদান্যতায় মহানগরের এই দুর্ভোগ। এই তিন প্রতিষ্ঠানের বোধের পরিধি সংকুচিত হতে হতে পতনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই সমন্বয়হীনতার যেন শেষ নেই। এই হীনতার কবলে পড়ে দেশ-জাতি ও রাষ্ট্র আজ বিব্রত। অপতৎপরতা যতদিন থাকবে, রক্তক্ষরণও ততদিন অব্যাহত থাকবে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, ‘এর কি কোনো শেষ নেই!’
আছে। আমাদের অনৈতিক চিন্তা-চেতনা বা বোধের ওপর সফল অস্ত্রোপচার করা গেলে হয়তো আমরা সুস্থ পথে চলার একটা সুযোগ লাভ করতে পারি। আর সেই পথে চলতে চলতে একসময় হয়তো নান্দনিক সেই বোধের কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারি। কিন্তু এখানেও একটি বাধার প্রাচীর পথরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সেই চিকিৎসককে পাব কোথায়? যিনি অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করে তুলবেন গোটা সমাজকে! আমরা মনে করি, চিকিৎসক আমাদের আছে। প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের। রাজনীতিকরা যদি সততার সঙ্গে তাদের সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকর করতে এগিয়ে আসেন তাহলে আমাদের রাজপথ সংকুচিত হওয়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে। সমাজ থেকে সকল সমন্বয়হীনতার মৃত্যু হতে পারে। ঢাকা মহানগর একটি নান্দনিক শহরে রূপান্তর হতে পারে। যা ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন।
পিডিএসও/হেলাল