সম্পাদকীয়
আবারও ঋণ কেলেঙ্কারি
নৈতিকতা হারিয়ে আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তার নতুন নামকরণ হয়েছে। অনেকের মতে, এ মাটির নাম অবক্ষয়ের চারণভূমি। এ ভূমিতে যারা ‘কেলেঙ্কারি’ শব্দটির সঙ্গে যত বেশি নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন, তারাই এ সাম্রাজ্যের হিরো। রাষ্ট্রের সব সম্মানজনক মেডেল তাদের জন্যই সুরক্ষিত আছে এবং থেকেছে। এরাই সমাজের সবস্তরের সাধারণ মানুষের পিঠে চাবুকের শব্দ তুলে নিজেদের সম্পদকে সুসংহত করে চলেছেন। এদের সামনে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ নেই।
লুটেরা পুঁজির পাশবিক শক্তির কাছে আজ সবকিছুই যেন পরাজিত। নৈতিকতার নান্দনিকতায় সমৃদ্ধ এত দিনের ভালোবাসার নির্যাসে গড়া মধ্যবিত্তের চরিত্রে যে ভাঙন ধরেছে, তাকে আর রোখা যাচ্ছে না। অনৈতিক পুঁজির পাশবিক তাণ্ডবের জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়ার ভয়ে তারা আজ সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আত্মরক্ষার তাগিদে আত্মসমর্পণের পথে পা বাড়িয়েছে। প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের কেউ নেই বলেই বিদেশে রফতানির নামে জনতা ব্যাংকে আবারও বড় মাপের ঋণ কেলেঙ্কারির কথা উঠে এসেছে পত্র-পত্রিকায়।
পত্রিকা বলছে, জনতা ব্যাংক ও সরকারি তহবিল থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপ হাতিয়ে নিয়েছে ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধান রিপোর্টে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়, ভুয়া রফতানির নামে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তার অর্থ তুলে নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। অপকর্মে সহায়তা করার পাশাপাশি ক্রিসেন্ট গ্রুপকে অর্থায়ন করেছে জনতা ব্যাংক। ক্রিসেন্টের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা এ মুহূর্তে ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। গ্রাহক তিনভাবে এই টাকা চুরি অথবা আত্মসাৎ করেছেন—
এক. রফতানি বিলের টাকা বিদেশে রেখে দিয়েছেন। দুই. ব্যাংক সেই বিল কিনে গ্রাহককে নগদ টাকা দিয়েছে। তিন. এসব রফতানির বিপরীতে সরকার থেকে নগদ সহায়তাও নিয়েছে সরকার। এর আগেও এক গ্রাহককে সকল প্রকার নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে জনতা ব্যাংক ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা ঋণ ও ঋণ সুবিধা দিয়েছিল। তার সেই অনৈতিক কাজের জন্য কোনো পক্ষকে সাজার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, এমনটা শোনা যায়নি।
এবারের ঘটনায়ও তার যে কোনো ব্যতিক্রম কিছু হবে, এমনটা কেউ আশা করে না। তবে এ কথা সত্য যে, সমাজের বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠানের এহেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে তা হবে সমাজের জন্য একটি অশনিসংকেত। যে অশনিসংকেতের দাবানলে ধ্বংস হবে আমাদের সভ্যতা। সুতরাং সময় থাকতে সবাইকে সংশোধনের পথের কথা ভাবতে হবে। নেতৃত্বে ফিরে আসতে হবে মধ্যবিত্তকেই।
পিডিএসও/হেলাল