সম্পাদকীয়
নক্ষত্রদের বিদায়
সামনে কোয়ার্টার ফাইনাল। বিশ্বগ্যালারিতে এখন বেহালায় মেঘমল্লার রাগে ঝরে পড়ছে বেদনাশ্রু। একই দিনে মেসি ও রোনালদোকে বিদায় জানাতে কেঁদেছে আর্জেন্টিনা, পর্তুগালসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। তাদের এ কান্না ফুটবল ইতিহাসকে যেমন মহিমান্বিত করেছে; ঠিক একইভাবে নতুন নক্ষত্র নির্মাণে রেখেছে বিশেষ ভূমিকা। নেইমার এখনো মেসি-রোনালদোর মতো পরিপূর্ণ নক্ষত্র হতে না পারলেও তার কাছে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমিকদের আকাঙ্ক্ষা অনেক। তার সামনে সেই সুযোগ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ভক্তদের বিশ্বাস, নেইমার তাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবেন না। পাশাপাশি অভিজ্ঞজনরা বলছেন, বিশ্বাস আর বাস্তবতা কোনো সমার্থক শব্দ নয়। আবেগ দিয়ে ফলাফল নির্ণয় করা যায় না। ফলাফল নির্ণিত হবে যোগ্যতার মাপকাঠিতে। আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালকে আসর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে যোগ্যতার তুলাদণ্ডে।
যোগ্যতার তুলাদণ্ডে আরো চারটি দলকে বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় নিতে হবে। আটটি দল ইতোমধ্যেই বিদায় নিয়েছে। ছোট দল বলে অবহেলা করা হবে এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। অন্তত এবারের বিশ্বকাপে। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, ‘কাপ যাচ্ছে অমুকের ঘরে’। কিন্তু এখন পর্যন্ত বলা যায়, কারো অনুমানই সত্যের কাছাকাছি নাও পৌঁছাতে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্বকাপজয়ী দল ছিটকে পড়েছে। এর আগে আমরা হারিয়েছি ইতালিকে। অর্থাৎ ফুটবল পরাশক্তিদের পরাজয়ের ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠেছে বলে মতামত প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা আরো বলেছেন, ফুটবলে এখন একক কৃতিত্বের কিছু নেই। এগারোজনকেই সমান দক্ষতায় লড়তে হয় অসম্ভব গতিতে। এখনে গতি যার আনুগত্যে থাকবে, ফলাফল তারই অনুকূলে যাবে। আর এই গতির প্রতিযোগিতায় তরুণরা যে এগিয়ে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। চলমান বিশ্বকাপ সে বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়েছে।
আবারও বলছি, ‘গতি’। এই গতি বাড়ানোর জন্যই চাই শক্তি। আর এই গতির উৎসই হচ্ছে তারুণ্য। যে তারুণ্য জয় করতে পারে অসম্ভবকে। এখন পর্যন্ত ২০১৮ বিশ্বকাপে তুলনামূলক বিচারে ছোট দল এবং তাদের তারুণ্যনির্ভর একাদশ সেই সম্ভাবনাকেই জাগিয়ে রেখেছে। টোটাল ফুটবলের যে কারুকাজ তা ‘ওয়ান টাচের’ মধ্যেই তার নান্দনিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। নিজেকে মেলে ধরার চেয়ে দলকে মেলে ধরার মধ্যেই রয়েছে নান্দনিকতার অনিন্দসুন্দর রূপ। যে রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে, একটি নন্দনশিল্প সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। আমরা সেই প্রত্যাশায় তাকিয়ে আছি চলমান বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতিটি মুহূর্তের দিকে।
পিডিএসও/হেলাল