সম্পাদকীয়
হালদাকে রক্ষা করা জরুরি
দেশে ‘মৎস্য ব্যাংক’ হিসেবে খ্যাত হালদা। যেখানে রয়েছে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। কিন্তু সীমাহীন বিপর্যয়ে এ নদীটি আজ মরতে বসেছে। হালদার দুই তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য এ নদীর চিরন্তন বৈশিষ্ট্যকে ক্রমেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তবে এমনটি আর ঘটতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া উচিত। প্রয়োজনে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মানসিকতাও তাদের থাকতে হবে। প্রকৃতির অনন্য উপহার হালদা নদী কিছু মানুষের অবিমৃষ্যকারিতার শিকার হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে—এটি মেনে নেওয়া যায় না।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১২ সালে হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু হয়েছিল ১ হাজার ৬০০ কেজি। ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬২৪ কেজি। ২০১৪ সালে আরো কমে হয় মাত্র ৫০০ কেজি। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা। মূলত রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাইশ প্রজাতির মাছ প্রজননের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে এ নদীতে আগমন করে। মাছগুলো এখানে এসে ডিম ছাড়লে জেলেরা তা সংগ্রহ করে বংশপরম্পরায় শিখে আসা কৌশল কাজে লাগিয়ে প্রথমে রেণু ও পরে সেই রেণু থেকে পোনা তৈরি করে থাকে। হালদার পোনা দ্রুত বড় হওয়ায় দেশের মৎস্যচাষিদের কাছে এগুলোর বিশেষ কদর থাকলেও উদ্বেগজনক হলো, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের এ কেন্দ্রটি বর্তমানে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার। এর ফলে, একদিকে যেমন হালদা প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে প্রজননের জন্য এখানে আসা মা-মাছগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
হালদাকে বলা হয়, রুইজাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক ‘জিন ব্যাংক’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জাতীয় অর্থনীতিতে অশেষ গুরুত্ববহনকারী হালদা নদীর ৯৮ কিলোমিটার গতিপথে মারাত্মক দূষণ ঘটছে। এতে এ নদীর প্রাকৃতিক প্রজনন তথা মাছের স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা দারুলভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নদীর গতিপথে রাবার ড্যাম ও বাঁক সৃষ্টি করায় নদীর প্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধা পাচ্ছে।
‘হালদা নদী রক্ষা কমিটি’র সভাপতি ড. কিবরীয়া বলেন, সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এবং হালদা তীরবর্তী জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে হালদাকে অবিলম্বে সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় হালদার বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হবে না।
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হালদাকে সুরক্ষার যে দাবি জানাচ্ছে, আমরাও তাদের দাবির সঙ্গে একমত। কারণ, অর্থনৈতিক অবদানসহ বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে হালদা বাংলাদেশের একমাত্র ‘জাতীয় মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র’ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু মানুষের সৃষ্ট বিভিন্নমুখী অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে আজ হালদায় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে হালদাকে রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।
পিডিএসও/হেলাল