সম্পাদকীয়

  ২৭ জুন, ২০১৮

আদালতের চোখে জল

উপস্থিত বিচারক। উপস্থিত আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা। উপস্থিত সবার দৃষ্টি একটি বিন্দুতে। যেখানে দাঁড়িয়ে শিশুদ্বয় বলছে, আমরা আমাদের মা-বাবা দুজনকেই ভালোবাসি। এ ভালোবাসাকে কোনো পাল্লায় তুলে পরিমাপ করা যাবে না। এ ভালোবাসাকে দ্বিখণ্ডিত করলে পৃথিবীর সব ভালোবাসার অপমৃত্যু হবে। গত এক বছর আমরা আমাদের মাকে দেখিনি। আমাদের ভালোবাসাকে দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের হৃৎপিণ্ডে রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই রক্তক্ষরণের প্রতি কেউই সহানুভূতি দেখাতে আসেনি। আজ এই আদালতে আমাদের হাজির করা হয়েছে; সেই রক্তক্ষরণকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে। কিন্তু আমরা আর আমাদের কষ্টকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না, মা-বাবার সঙ্গে থাকতে চাই।

আদালত কক্ষে তখন পিনপতনের শব্দও বাকরুদ্ধ। শিশুদ্বয়ের এই আকুতি যেন স্পর্শ করেছে আদালত চত্বরের পারিপার্শ্বিকতায়। আবেগাপ্লুত পরিবেশে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরাসহ কেঁদেছেন অনেকেই। কেঁদেছে আদালত চত্বর। তবে আইন বলেছে, আইন আইনের পথেই চলবে। এখানে আবেগের কোনো স্থান নেই। রায়ে বলা হলো, শিশুদ্বয় মায়ের হেফাজতে থাকবে। পাশাপাশি পিতাও সন্তানদ্বয়কে দেখার সুযোগ পাবেন। কেউ বাধা দিতে পারবেন না। কেউ বাধা দিতে আসেনি। সন্তানরা তাদের মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরম মমতায় সন্তানদের বুকে আগলে ধরেন মা। মায়ের কান্নার মাঝে সন্তানদের কান্নার ঢেউও আছড়ে পড়ে আদালত কক্ষে। নতুন করে ভালোবাসার এক মহাপ্রলয়ের জন্ম দেয়। বড় সন্তান সেই কান্নার গমকের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাবাকে বলতে থাকে, ‘বাবা তুমিও এখানে এসো। আম্মুকে সরি বলো’। বাবাও এগিয়ে এলেন। আবেগ যেন আদালতকেও স্পর্শ করল। নতুনভাবে নতুন আবেগে আদালত মা-বাবার উদ্দেশে বললেন, ‘সন্তানরা কী চাচ্ছেন, সেটা দেখুন। তারা আপনাদের বিচ্ছিন্নতাকে সমর্থন করে না। একসঙ্গে দেখতে চায়। ওদের আকুতি কি আপনাদের স্পর্শ করে না।’

একটি রায়ের মধ্য দিয়ে সংসার দ্বিখণ্ডিত হলেও মা-বাবা সেখানে রক্ত ঝরতে দিলেন না। সন্তানদের হৃৎপিণ্ডের রক্তক্ষরণকে চিরকালের জন্য বন্ধ করার জন্য ঘোষণা করলেন, সন্তানদের ভালোবাসার কাছে আমরা পরাজিত। আমরা আমাদের ক্রোধ ও ঘৃণাকে সন্তানের ভালোবাসার পায়ে সমর্পণ করে আমাদের পুরনো সংসারে ফিরে যেতে চাই। আদালত তাদের দেওয়া রায় তুলে নিয়ে বললেন, ভালোবাসার কাছে মাঝেমধ্যে আইন পরাজিত হয়ে নিজেকে আরো শক্তিশালী করার সুযোগ পায়। এখানে আজ তার নিদর্শন তৈরি করল দুই শিশু। দুই শিশুসহ মা-বাবা নতুন করে সুন্দর একটি জীবনে প্রবেশ করবেন, এটাই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আদালতের চোখে জল,আদালত,জল,সম্পাদকীয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist