সম্পাদকীয়
নিয়ন্ত্রণহীনতায় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র
‘শুনেছি গাঁজার নৌকা পাহাড় বাইয়া যায়। বাক্যটি সত্য হইলে দুর্নীতির জাহাজ কাহার ওপর দিয়া বহিয়া যাইবে!’- এ প্রশ্নের জবাব সবারই জানা। তবে সমাধান নেই। সম্ভবত আজ অবধি কেউ দিতে পারেননি। পারেননি বলেই এ জাহাজ তার ইচ্ছামতো পথে দ্বিধাহীনভাবে এবং নির্লিপ্ততার সঙ্গে পরিভ্রমণ করে।
শক্তির ভারসাম্যে এ দেশে দুর্নীতি আজ অপ্রতিরোধ্য। আইনের কোনো শিকল দিয়ে তাকে আর বেঁধে রাখার উপায় নেই। ফাঁক বলে কথা। আইনের ফাঁক দিয়ে অহরহ বেরিয়ে যাচ্ছেন রাঘববোয়ালরা। কিন্তু এর কারণ কী?
প্রথমেই বলেছি, সমাধান কেউ দিতে পারেননি। আসলে কি তাই! এখানে বলতে হয়, না; বিষয়টা এ রকম নয়। সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণটা সবাই জানেন। তবে বলতে পারেন না। সৎ সাহসের অভাব রয়েছে। এ রকম অভাব শুধু একজনের নয়। গোটা সমাজব্যবস্থার। অর্থাৎ গোটা জাতিই এখন দুর্নীতির রেসিপি হাতে নিয়ে চলাচল করছে। বিশেষ করে দেশ ও জাতিকে যারা পরিচালনা করছেন তারাই এ ব্যাপারে মনোযোগী নন। এ অভিযোগ কোনো একক ব্যক্তিবিশেষের নয়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই এভাবেই চিন্তা করে। তাদের চারপাশে অহরহ নানা ধরনের দুর্নীতির ঘটনা যেভাবে ঘটে চলেছে তা দেখেই তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে এভাবেই চিন্তা করতে অভ্যস্ত হয়েছেন।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ ধরনের একটি ঘটনা সবাইকে সেই পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের (দুর্নীতির) কথা নতুন করে মনে করিয়ে দিল। মহাসড়কে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন ঠেকাতে তিন বছর আগে কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বসানো হয়েছিল ওজন স্টেশন। যন্ত্রটি বিকল হতে সাত দিনও সময় লাগেনি। তবে সারাতে সময় লাগে এক নয়, দুই নয়, ১৬-১৬টি মাস।
কিন্তু এ মলমে কাজ হয়নি। আবারও বিকল হতে সাত দিনও সময় লাগেনি। তবে মেশিনটি কেনা থেকে শুরু করে দু-দুইবার মেরামত করতে টাকার জোগান দিতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষের লোকজন টাকার জোগান গ্রহণ করে তা বিতরণও করেছে যথারীতি। কিন্তু নতুন মেশিনকে একবারের জন্য হলেও চালু করতে পারেনি, পারেনি মেরামত করে অকেজো মেশিনকে চালু করতে।
ফলে আইনকে প্রতিবন্ধীতে রূপান্তর ঘটিয়ে দুর্নীতিবাজ মানুষগুলো এখানে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে অবাধে যানবাহন চলাচল করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক, ঝুঁকিতে রয়েছে সেতু। চিঠি চালাচালিও কম হয়নি, এখনো চলছে। এ যেন ‘কিষেন চন্দর’ সেই বৃক্ষ কাহিনির প্রতিচ্ছবির একটি অংশ মাত্র। অন্য অংশের সারাংশ নিয়ে বেশি আলোচনার প্রয়োজন নেই। অংশটি দুর্নীতিবিষয়ক জটিলতা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা ছিল দুর্নীতির মোড়কে বাধা।
সব কিছুই চোখের সামনে ঘটলেও নৈতিকতার পক্ষে কারো যেন কিছুই করার নেই। সব অনিয়ম যখন নিয়মে পরিণত হয়, তখন এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতার মধ্যেই আমাদের বসবাস। যে স্বাভাবিকতা কখনোই কোনো দেশ, জাতি বা রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এমন স্বাভাবিকতার (!) বিরুদ্ধে প্রয়োজন দুর্বার আন্দোলন। প্রতীক্ষায় ১৬ কোটি মানুষ।
পিডিএসও/তাজ