দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ০৩ জুন, ২০১৮

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বিশ্বের কাছে মডেল হিসেবে তুলে ধরার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। সম্প্রতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধনকালে দুই দেশের শীর্ষ নেতার পক্ষ থেকে এই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে বিশ্বের কাছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘মডেল’ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, পরস্পরের বিকাশে সহযোগিতা করছে, তা অন্যদের জন্যও একটি শিক্ষা, একটি উদাহরণ। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে সোনালি অধ্যায় চলছে। দুই দেশের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা আছে, যেগুলোর সমাধান অসম্ভব মনে হচ্ছিল কিন্তু যৌথভাবে সেই সমস্যাগুলোরও সমাধান হয়েছে। ১৯৬৫ সাল থেকে কানেকটিভিটি কার্যত থমকে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে আমরা এ ইস্যুতে কাজ শুরু করেছি এবং দুই দেশের মধ্যে সড়ক, রেলসহ সব ক্ষেত্রে সংযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা হচ্ছে। জলপথেও যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। ইন্টারনেটের প্রসারেও ভারত হাত বাড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ আদান-প্রদান বাড়ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আধা ঘণ্টার বৈঠকও হয়। এ বৈঠকে নিরাপত্তা, সীমান্ত সন্ত্রাসসহ দুই দেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলার ব্যাপারেও তারা একমত হন। এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার নাম উল্লেখ না করে যে বক্তব্য দেন তা তাৎপর্যপূর্ণ। বলেন, প্রতিবেশী দেশ থাকলে কিছু সমস্যাও থাকে। সমস্যাগুলো আমরা একে একে সমাধান করছি। যেগুলো বাকি আছে সে কথা বলে আমি এই চমৎকার অনুষ্ঠান নষ্ট করতে চাই না। আশা করব যেকোনো সমস্যা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে সুরাহা করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। দুই দেশের মানুষের কল্যাণে এ বন্ধুত্বকে এগিয়ে নেওয়া সবারই কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দুটি দেশ একই সঙ্গে সার্ক, বিমসটেক, আইওয়া এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য। বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার হয়ে থাকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী জোটের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি উদ্বাস্তুকে আশ্রয়দান ও স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ২৫ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি, ১৯৭৪ সালের ১৬ মে মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উদারীকরণের সূত্রপাতের সঙ্গে তা বৃহত্তর প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যের উদ্ভব ঘটায়। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে। তারা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হয়। বন্ধুদেশ হিসেবে ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দেশ দুটির মধ্যে ৩০ বছরমেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা চলে।

২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় প্রতিশ্রুত ১১টি উন্নয়ন সহযোগী উদ্যোগের অধিকাংশই এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই তো সেদিন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করে আমাদের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ভারত (বিবিআইএন) উদ্যোগসহ দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক বহুমাত্রিক হচ্ছে।

বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। মাঝেমধ্যে দুই দেশের সম্পর্কে স্থবিরতা বিরাজ করলেও উভয় দেশের সহযোগিতায় তা আবারও বেগবান হয়েছে। অস্বীকার করা যাবে না, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ঐতিহাসিক ভিত্তি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ, যা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রীয় চেতনাকে বেগবান করা। ফলে দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে সম্পর্কের আস্থা সুসংহত করে বিদ্যমান বিরোধগুলোকে সহনশীল মাত্রায় নামিয়ে আনা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বেশ কিছু অমীমাংসিত ইস্যুতে উভয় দেশ একমত হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্মরণকালের মধ্যে এখন উষ্ণতম। দীর্ঘদিন অমীমাংসিত থাকা প্রধান প্রধান দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান হয়েছে। দুই দেশ সহযোগিতার নতুন এক কাল অতিক্রম করছে। সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঢাকা-নয়াদিল্লি-ঢাকা মডেল স্থাপন করেছে। নতুন উচ্চতায় উন্নীত এই সম্পর্ক দুই দেশের মানুষের জন্যই বড় আশাব্যঞ্জক। এরই মধ্যে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার ভারতের এই প্রতিশ্রুতি উভয় দেশকে আরো সমৃদ্ধির দিকেই ধাবিত করবে-এমন মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,ভারত,বন্ধুত্ব,প্রতিবেশী দেশ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist