কামার ফরিদ
কেউ কথা রাখেনি...
ফি বছর একই দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষকে। রোজা আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় সবকিছুর দাম। অনেকের মতে, অফিস-আদালতে ঘুষ খাওয়ার গুণগত মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাকি পণ্যমূল্যের দাম ওঠানামা করে। তথ্যটি নিয়ে অনেক গবেষণার কথা শোনা গেলেও, সত্যতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে বাজারদর বাড়ল না কমল, এ নিয়ে কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই। ব্যাগ হাতে বাজারে পৌঁছাতে পারলেই টের পাওয়া যায়।
মনে হয়, এবারই প্রথম ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটল। গত বছরের তুলনায় পণ্যমূল্য তেমন একটা বাড়েনি। বিস্ময়কর হলেও বলতে দ্বিধা নেই, কিছু কিছু পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু কেন এই বিরল ঘটনার উপস্থিতি! বিশ্লেষকরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি। সরকারের মনিটরিং টিমের কঠোর অবস্থান। অবস্থা এ রকম থাকলে ভোক্তাদের খুব একটা দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। প্রায় সব পণ্যই মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে। তবে তিনটি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি মনিটরিং টিম। যার মধ্যে বেগুন যেন হান্ড্রেড মিটার স্প্রিন্টে উসাইন বোল্টের গতিকেও হারিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি অন্যান্য পণ্যের ওপরও সংক্রমিত হতে পারে।
আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। গতকালের সবজি বাজার অনুসরণ করেছে বেগুনকে। প্রায় প্রতিটি তরকারির দাম দ্বিগুণের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছায়।
এদিকে বাজারদর প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী প্রতিবারের মতো এবারও অনেক আশ্বাসবাণী শুনিয়েছেন। তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন আশ্বাসের প্রতি ইতোমধ্যেই অনাস্থা জানিয়েছেন ভোক্তারা। কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘গতানুগতিক’। তাদের মতে, একসঙ্গে পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যবসায়ীরা নৈতিকতার বাইরে গিয়ে সুযোগ নিচ্ছে। ক্যাবের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, রোজায় কয়েকটি পণ্যের চাহিদা অন্যান্য সময়ের সাধারণ চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তবে উৎপাদন এবং আমদানিতে কোনো ঘাটতি না থাকার পরও দাম বেড়েছে এবং বাড়ছে, যা এখন সরকারের মনিটরিং সেলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সাধারণ মানুষকে তাই এর মাসুল গুনতে হবে।
আমরা মনে করি, সমস্যার সমাধান পেতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সরকারকে দেশব্যাপী একটি চেইনশপ গড়ে তুলতে হবে। যে চেইনশপমুক্ত বাজারের স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রতিরোধ করবে এবং এই শপ সারা বছর ধরে পণ্যমূল্য প্রশ্নে মুক্তবাজারকে একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এনে দাঁড় করাবে। এ দেশের মানুষ সারা বছর একটি গ্রহণযোগ্য পণ্যমূল্যের অধীনে থাকতে আগ্রহী। সরকার নিশ্চয়ই এই আগ্রহের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসবে-এটাই সবার প্রত্যাশা।
পিডিএসও/রিহাব