সম্পাদকীয়
রোহিঙ্গা সংকটে ওআইসি
রোহিঙ্গা সংকট কোনো সাধারণ সংকট নয়। প্রকৃতির হাতে সৃষ্ট কোনো সংকটও নয়। এটি প্রকৃত অর্থেই মানুষের অনৈতিক সিদ্ধান্তে সৃষ্ট এক অমানবিক দুর্যোগ। যা মিয়ানমার সরকার তাদের পাশবিক আচরণের মধ্য দিয়ে তার দেশের ১০ লক্ষাধিক নাগরিককে বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত করে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশের সীমানায়। এ সময় তাদের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞকে স্মরণকালের এক চরমতম বর্বরতা বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বের বিবেকবান মানুষ। একমাত্র চীন, রাশিয়া ও ভারত সরকারকে এ বর্বরতার বিরুদ্ধে তেমন একটা সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। বিপরীতে বলা যায়, তাদের কারণেই সংকট সমাধান অনেকটাই বিলম্বিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ একসঙ্গে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে যে মানবিক আচরণ করেছে, তা ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। এ বিষয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই একমত পোষণ করে। আর এই একমত পোষণ করার কারণেই সংকট নিরসনে তারা বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। এ নির্যাতনকে জাতিগত নিধন আখ্যায়িত করে অবিলম্বে সংকট সমাধানে দেওয়া কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশ পূর্ণ বাস্তবায়ন করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে ৫৭ জাতি সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন ওআইসি।
বাহ্যিকভাবে দেখলে সংকটটি শুধুই বাংলাদেশের। কিন্তু একটু গভীরে তাকালে দেখা যাবে, সংকটটি শুধু বাংলাদেশের নয়, মানবিক বিশ্বের এক মহাবিপর্যয়ের। রোহিঙ্গারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে অথবা বলা যায় আশ্রয় পেয়েছে, আগামী বর্ষা মৌসুমে সেই আশ্রয়টি তাদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেকোনো সময় ভূমিধস এসে কেড়ে নিতে পারে তাদের জীবন। প্রবল বর্ষণে ভেসে যেতে পারে তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপন। বাংলাদেশের মাটিতে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিক দেশের কতটা শক্তিশালী, তা বোধকরি সবারই জানা। সুতরাং, মানবতা রক্ষার স্বার্থে আগামী চার মাসের জন্য মানবিক মানুষের (দেশি অথবা বিদেশি) দৃষ্টি রোহিঙ্গা শিবিরের দিকে ফেরানো আজ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। নতুবা বিপর্যস্ত এই ১০ লক্ষাধিক মানুষের ওপর মহাবিপর্যয় এসে আঘাত হানতে পারে। যে আঘাত শুধু ১০ লক্ষাধিক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গার ওপরে গিয়েই পড়বে না, পড়বে সংবেদনশীল বাংলাদেশ এবং মানবতাবাদী বিশ্বের ওপর; যা আগামীতে বুমেরাং হয়ে ফিরে যেতে পারে তথাকথিত সভ্যতার দাবিদার সু চির ফ্যাসিস্ট মিয়ানমারের সাম্রাজ্যে। আমরা জানি, গতির ওপরে নিউটনের তৃতীয় সূত্র বিজ্ঞানে এখনো সত্য বলে বিবেচিত।
পিডিএসও/হেলাল