সম্পাদকীয়

  ১৬ এপ্রিল, ২০১৮

তুঘলকি আমলে বাংলাদেশ

এখন যে ঘটনাটি উল্লেখ করা হবে—এ রকম ঘটনা বাংলাদেশের কোথায় নেই! এর জবাব আজ আর আমাদের কাছে নেই। আমরা একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলতে পারছি না, ‘এখানে নেই’। সর্বত্রই অবস্থা এক। স্বাধীনতার পরপরই যে লুটেরাপুঁজির সংস্কৃতির সঙ্গে আমরা চলতে শুরু করেছিলাম, সেখান থেকে আর আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি। এর বিপরীতে বলা যায়, আমাদের বেরিয়ে আসতে দেওয়া হয়নি।

৪৭ বছরের অভ্যাসে তা এখন আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। আর সমাজব্যাবস্থা যেখানে গিয়ে পৌঁছানোর কথা, সে ঠিক সেখানে গিয়েই পৌঁছায়। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি ও সংস্কৃতি আজ লুটেরা সংস্কৃতির নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ আপাতত যেন আর খোলা নেই। অবশ্য এই লুটেরাপুঁজির অন্তিম সময় যেন খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। নিজের সীমাহীন পাপের ভার সহ্য করতে না পেরে নিজেই নিজের ওপর ভেঙে পড়বে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে লাশ বহনে চলছে তুঘলকি কর্মকাণ্ড। আর এ অপকর্মের পেছনে রয়েছে পুলিশ ও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ। তথ্যটি সংবাদমাধ্যমের। হাসপাতালের ভেতরে থাকা বেসরকারি মাইক্রোবাস সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা। সেখানে ভাড়ার ব্যাপারে মাইক্রোবাসের তুঘলকি কারবারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউ।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ক্ষেত্রবিশেষ তাদের দিতে হচ্ছে দশ গুণ ভাড়া। এসব অনিয়ম এবং ভোগবাদী সংস্কৃতির নিপীড়ন দেখার কেউ নেই। থাকার কথাও না। যখন রক্ষক, ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে—তখন সব নান্দনিক কর্মকাণ্ড সেখান থেকে বিদায় নিতে বাধ্য। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত পত্রপত্রিকার রিপোর্ট সে কথাই প্রমাণ করে।

ভোগবাদী লুটেরা পুঁজির সাংস্কৃতিক চরিত্র আজ এমন একপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে এর যেন নিচে নামা আর সম্ভব নয়। আপনজনের লাশ নিয়ে স্বজনরা যখন শোকে এবং বিপদে বিহ্বল, ঠিক তখনই শুরু হয় তুঘলকি কাণ্ড। ইচ্ছামতো স্বজনদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বাড়তি ভাড়ার চাপ, যা কখনো কখনো দশ গুণকেও অতিক্রম করে। পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্মকর্তাদের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট বাইরে থেকে কোনো গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দেয় এবং লাশ বহন করতে দেয় না। বাইরে থেকে আসা গাড়ি ন্যায্যমূল্যে লাশ বহন করে বলে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা।

আমরা মনে করি, লুটেরাপুঁজিকে এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। সময়ক্ষেপণে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সুতরাং, সময় থাকতে সাবধান হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর সাবধান হওয়ার পরামর্শটাই রইল আমাদের পক্ষ থেকে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ,তুঘলকি কাণ্ড,লাশ বহন,মাইক্রোবাস সিন্ডিকেট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist