সম্পাদকীয়
এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে
পুলিশ পারেনি। শেষ পর্যন্ত বাবুলকে গ্রেফতারে সক্ষম হলো র্যাব। এ ব্যাপারে পুলিশকে যতটা না ঘাম ঝরাতে হয়েছে, তারচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আর যোগাযোগমাধ্যমের এ তৎপরতা না থাকলে বিউটি ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি এত দিনে তামাদি হয়ে পড়ত বলেই সবার বিশ্বাস। যথাসময়ে বিউটির নিরাপত্তাকে নিশ্চিত না করে পুলিশ যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এতে ধর্ষক ও হত্যাকারী বাবুলের কর্মসম্পাদনের পথকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে।
বিউটির প্রতি সদয় হতে না পারলেও বাবুলের প্রতি পরোক্ষে আনুগত্য দেখিয়ে পুলিশ যা করেছে, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তা একটি বিরল ঘটনা এবং প্রশংসার(!) দাবিদারও বটে। এ ক্ষেত্রে আমরা হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানায় দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করার দাবিও উত্থাপন করতে পারি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার পর কিশোরী বিউটি আক্তারকে দ্বিতীয় দফায় বাড়ি থেকে ‘অপহরণ ও ধর্ষণ করে’ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার রামদা গ্রামের ফুফুর বাড়ি থেকে গত শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, যখন সে পুলিশের হাতের নাগালের মধ্যে ছিল, তখন পুলিশ তার টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি।
অনেকের মতে, এ ক্ষেত্রে পুলিশের স্বদিচ্ছার অভাব ছিল। অভাব থাকার কারণেই বিউটিকে নির্মম হত্যার শিকার হতে হয়েছে। এ প্রশ্নে সমাজ বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ জন্য পুরো আর্থ-সামাজিক সংস্কৃতিকেই দায়ী করা যায়। যাদের ওপর এ কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব ছিল, তাদের কেউই তা করেননি। স্বাধীনতার শুরুতেই লুটেরা পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। নব্য স্বাধীন দেশে এ রকম ঘটে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। তবে যারা দেশ পরিচালনায় থেকেছেন, তাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজন ছিল। তারা তা ছিলেন না। লুটেরা পুঁজিকে তার চরিত্র থেকে ফিরিয়ে আনার কোনো চেষ্টাও করা হয়নি। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা হয়েছে।
আজ যা এক মহাফ্রাঙ্কাইস্টাইনে পরিণত হয়ে পুরো সমাজব্যবস্থাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আর এটাই হচ্ছে লুটেরাপুঁজির সাংস্কৃতির স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ। আমরা মনে করি, এ পুঁজির চরিত্র যত দিন না জাতীয় পুঁজির চরিত্রে রূপান্তর ঘটে, তত দিন এখান থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
কাজটা অনেক দুরূহ এবং সময় সাপেক্ষ। তাই এ মুহূর্তের করণীয় হিসেবে আমরা বিচারের মাধ্যমে বাবুল মিয়ার এ অপকর্মের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করতেই পারি। শাস্তির আশা করতে পারি সেই পুলিশ কর্মকর্তার, যার দায়িত্বহীনতার কারণে বিউটির মতো এক কিশোরীকে জাগ্রত(!) সমাজব্যবস্থার চোখের সামনে অপমান অপদস্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত এক পিশাচের হাতে খুন হতে হলো।
আমাদের প্রত্যাশা এমন একটি রায়, যাকে স্মরণ করে পুরো সমাজব্যবস্থা কিছুটা হলেও নিজেকে শুধরে নিতে এগিয়ে আসে।
পিডিএসও/তাজ