সম্পাদকীয়
টাকার অভাব কোথায়!
কোথাও অভাব নেই। মুদ্রার এপিঠ বলছে নেই, ওপিঠ বলছে আছে। তাহলে সত্যটা কী? কিছুদিন ধরেই পত্রপত্রিকার উঠোনে শোনা যাচ্ছে, ‘২০ ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট চলছে।’ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে ভুল নেই। বাইরে থেকে দেখলে বিষয়টি সত্য বলে মানতে আমরা বাধ্য। তবে, ভেতরের গল্পটা ভিন্ন। মূল সংকট টাকাতে নয়, ব্যবস্থাপনায়। ব্যবস্থাপনা যখন সততা বিবর্জিত হবে, তখন কেবল তারল্যে নয়—কঠিনেও সংকট দেখা দিতে বাধ্য। দেশের ব্যাংক খাতের অবস্থাও অনেকটা সে রকম। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই, বাজেটের বাতাস শরীরে স্পর্শ করতে না করতেই শোনা যায় তারল্যের পদধ্বনি। এটা কোনো নতুন রোগ নয়। পুরনো বললে ভুলও বলা হবে না। তবে এখনো যে ক্রনিক পর্যায়ে উঠতে পারেনি, এটাই বা কম কিসে!
ঋণখেলাপির কথা শোনার পর আর কোনো উপমার প্রয়োজন নেই। কু-ঋণ দেওয়া এবং আদায়ের মধ্যে যে গোপন কথা লুকিয়ে থাকে, তা খোলাসা করতে পারলেই সবকিছু বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু কাজটি করবে কে? সহজ হলে এতদিন কেউ না কেউ পেন্ডরার বাক্স খুলে দিয়ে বলত, ‘দেখে নাও গলদটা কোথায়’? না, আমরা এখনো তা বের করতে পারিনি। পারিনি বলেই সংকটের মধ্যে বসবাস। তবে এ কথাও সত্য, পেন্ডরার বাক্স কেউ খুলে দিক আর নাই দিক, আমরা আমাদের তৃতীয় নয়ন দিয়ে যা দেখেছি এবং জেনেছি, সংকট সমাধানের জন্য সেটুকুই যথেষ্ট। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এরপরও আমরা পারিনি।
বেশির ভাগ ব্যাংক এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। মূলধন সংকটে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। ঋণ দেওয়ার মতো অর্থের টান পড়েছে। প্রায় সব ব্যাংকই বাড়িয়েছে সুদের হার। এমনকি কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দেওয়া ঋণের টাকা ফেরত নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বেশ কিছু ব্যাংক নতুন করে ব্যবসায়ীদের ঋণ দিচ্ছে না। আমানত সংগ্রহে কর্মকর্তাদের ওপর টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পূরণে ব্যর্থ হলে চাকরিও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মধ্যমসারির কর্মকর্তারা। পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তারল্য সংকট কাটাতে ব্যাংকিং খাতে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা তারল্য জোগান দরকার। ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছে দুই হাজার কোটি টাকা চেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক।
আমরা মনে করি, ১১ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করা হলেও সমস্যার কোনো সমাধান হবে বলে মনে করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমাদের অভিজ্ঞতা সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা আশঙ্কিত, আগামীতে এই ১১ আবার ২২-এ পরিণত হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কেননা, রোগটা ক্যানসার। অপারেশন করে দেহ থেকে বাদ দেওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা আছে বলে জানা নেই। সুতরাং, ক্যানসার সারানোই হোক পরিত্রাণের একমাত্র উপায়।
পিডিএসও/হেলাল