সম্পাদকীয়
ঢাকার বাইরেও যানজট
শুধু ঢাকা শহরেই নয়, বাইরেও সংক্রমিত হচ্ছে যানজট। অনেকেই বলছেন, কারণটা জেনেটিক। তাদের মতে, এ দেশের মাটি ও মানুষের ফার্টিলিটি একবাক্যে বিশ্বে এক নম্বর। সে কারণেই যখনই যা কিছু শুরু হয়েছে তা যেন ব্যাঙের ছাতার মতো গ্রাস করেছে সমাজকে। একেই না বলে উর্বরতা! একবার দুর্নীতির দিকে তাকান। সমাজের অলিগলিতে, আনাচে-কানাচে, নদী-নালায়, সুউচ্চ দালান অথবা বস্তিতে কিংবা প্রশাসন বা প্রেমকানন কোথায় নেই! একইভাবে যানজট থেকে সেশনজট, সেশন থেকে প্রেশন পর্যন্ত। শান্তিতে কবরে যাবেন! তাও সকলের ভাগ্যে নেই। কিন্তু কেন? জবাব একটাই। জেনেটিক।
সম্ভবত ডাকা মহানগর যানজটের যন্ত্রণা সইতে সইতে এখন তার সইবার সব ক্ষমতা হারিয়েছে। কোনো প্রকার পেইনকিলারে আর কাজ হচ্ছে না। ড্রাগ সেবন করিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এ রকম পরিবেশে জটেরা বেশ বিপাকে পড়ায় নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছে। তারা এখন কুমিল্লার দাউদকান্দি ও মেঘনা এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। যানজট এখন এই মহাসড়কের নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিনই গোমতী ও মেঘনা সেতুর দুই পাশে লেগেই থাকছে ৫-১০ কিলোমিটার জুড়ে যানজট। শোনা যায় এই জটের কারণে প্রশাসনের কারো কারো পৌস মাস হলেও যাত্রীদের সর্বনাশ।
সর্বনাশ কি শুধু যাত্রীদের? না, দেশ ও জাতির ক্ষতির পরিমাণ কেউ নিরূপণ না করলেও বলা যায়, এখানে শুধু সর্বনাশই নয়; একেবারে সাড়ে সর্বনাশ। নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। পুড়ছে যানবাহনের অতিরিক্ত জ্বালানি। অপচয় হচ্ছে অর্থের। যে অর্থের অর্থ হচ্ছে ডলার (হার্ড কারেন্সি)। সার্বিক নিরাপত্তা নিয়েও দেখা দিচ্ছে শঙ্কা। এত কিছুর পরও বাঙালি জাতি তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কার্পণ্য করেনি। সমাধান নয়। যানজটের দৃশ্য দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম হয়ে প্রতিদিনই তা আরো বেড়েই চলেছে। কারণ খোঁজার চেষ্টাও যে করা হয়নি, তা নয়। কিন্তু কোনো ফল আসেনি। তবে অনেকের মতে, সেতু কর্তৃপক্ষের টোল আদায়ের ধীরগতির কারণেই এই যানজট। আবার কারো কারো মতে, যানবাহন চালকরাও দায়ী।
আমরা মনে করি, কারণ আমাদের অজানা নয়। সমাধান ও তাই। কিন্তু মূল কথা অন্যত্র। সমাধান করবে কে? কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপানো ঠিক হবে না। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকেই দায় নিতে হবে। সমাধান পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকেই সততার সঙ্গে সমাধানের দিকে এগিয়ে আসতে হবে এবং জরুরিভিত্তিতে সমন্বয়হীনতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। যদি সমন্বয়হীনকে দূর করা যায়, তাহলেই জাতি এই যানজটের অভিশপ্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে।
পিডিএসও/হেলাল