সম্পাদকীয়
সিটিং না চিটিং
বিষয়টি পরিকল্পিত। ট্রাফিক প্রশাসন, পুলিশ অথবা সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশাসন, সবাই বিষয়টি জানে বলেই আমাদের ধারণা। আমাদের বলতে আমরা সর্বসাধারণের কথা বলছি। এদের ধারণা এবং বিশ্বাস সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি জানে। তবে গণপরিবহন মালিকদের প্রশংসা না করলেই নয়। তারা পরিকল্পিতভাবে ও অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে কর্মটি করে চলেছে। তাদের সার্বিক সহায়তা করছে সরকারের নির্দিষ্ট বাহিনী। যাদের দায়িত্ব ছিল জনগণের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
কিন্তু কপাল বলে কথা! রক্ষক যখন ভক্ষক হবে তখন সাধারণ মানুষের ওপর দিয়েই বইবে ঝড়। সময়ের প্রেক্ষাপটে সে ঝড় বইছে। কবে থামবে তা কেউ জানেন না। আদৌ থামবে কি না, এ প্রশ্নেরও কোনো উত্তর নেই। কেননা, মামা না পেলেও আমরা কানা মামার দেখা পেয়েছি। সিটিংয়ের বদলে পেয়েছি চিটিং—এটাইবা কম কিসে!
ঢাকা শহরে এখন আর কোনো লোকাল বাস নেই। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা বলে কোনো বাছবিচারও নেই। সব বাসই এখন সিটিং সার্ভিসের আওতায়। প্রথম দিকে সিটিং শব্দের প্রতি কিছুটা আনুগত্য দেখালেও এখন তার লেশমাত্র নেই। বাসে যেনতেনভাবে ওঠাতে পারলেই আপনি অভিজাত হয়ে পড়বেন। ভাড়া গুনতে হবে দ্বিগুণ। যদিও তখন বাসের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকাটা হবে বাধ্যতামূলক। কেননা, বসার জন্য কোনো জায়গা খালি থাকবে না।
অমার্জিত, অমীমাংসিত ও পরিকল্পিত দুর্ভোগ আপনাকে পোহাতেই হবে। নামে সিটিং সার্ভিস হলেও দাঁড় করিয়ে যাত্রী বহন এখন একটি নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এ ধরনের অনৈতিক কাজ কীভাবে হতে পারে, সেটাই এক বড় প্রশ্ন। এ প্রশ্নেরও যেন কোনো জবাব নেই। জবাবদিহিতার কফিনে যখন পেরেক ঠোকার কাজ শেষ, তখন এ প্রশ্নের জবাব না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
বিষয়টি নিয়ে পত্র-পত্রিকাসহ মিডিয়ার বিভিন্ন অংশে আলোচনা কম হয়নি। কিন্তু লাভ কী! সাধারণের লাভ বরাবরের মতো ক্ষতির কাফেলায় সমবেত হয়েছে। পাঁচ টাকার ভাড়া ১০ টাকা হয়েছে। ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা। কথা রাখার কথা থাকলেও গণপরিবহন কথা রাখতে পারেনি। যদিও কথা রাখার ইতিহাস এ প্রতিষ্ঠানের কখনোই ছিল না।
তবু বলতে হয়, যারা আজ ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত হয়েছেন, তাদের জন্য বিষয়টি ইতিবাচক নাও হতে পারে। বুমেরাং হয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনাই বেশি। আমরা মনে করি, বুমেরাং হয়ে ফিরে আসার আগেই বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান হওয়া দরকার। কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই ভাববে—এমনটাই প্রত্যাশা।
পিডিএসও/তাজ