সম্পাদকীয়

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

নির্যাতিতের পক্ষে বলছি

কার্টুন : খলিল

ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। পৃথিবীতে আর অন্য কোনো দেশ স্বাধীনতার জন্য এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে কি না-তা অন্তত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় না! আমাদের স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যই ছিল শোষণ এবং বৈষম্যহীন একটি দেশ গড়ে তোলা। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা কী দেখছি! যে শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা স্বাধীনতা এনেছি, আজ স্বাধীন বাংলাদেশে সেই বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে বা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একটি দেশকে খুব সুন্দরভাবে ধ্বংস করতে হলে প্রথমে সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং তরুণ প্রজন্মের মনোবলকে ভেঙে দিতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখন আইসিইউতে ভর্তি আর তরুণ প্রজন্মও আইসিইউতে ভর্তির খুব কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, বৈষম্যের শিকার হয়ে আমাদের দেশের জনগণ দেশ স্বাধীন করেছে, সেই স্বাধীন দেশেই আজ বৈষম্য।

পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশে যেখানে মেধাবীদের তিরস্কার করা হয় আর অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের পুরস্কৃত করা হয়! এ দেশ চলে ৫৬ শতাংশ কোটা দিয়ে! আর সেখানে মেধাবীর সংখ্যা ৪৪ শতাংশ। ভাবলে অবাক হতে হয়, এলাকার বা গ্রামের ১০০ লোকের মধ্যে ৫৬ জনকে কোটায় আর মাত্র ৪৪ জনকে মেধায় নিয়োগের কথাটি। আসলেই কি একটি এলাকায় ১০০ জনের মধ্যে ৫৬ জন কোটাধারী পাওয়ার কথা? বাস্তবে তা কখনোই সম্ভব না। সরকারের বিদ্যমান যেসব কোটার ক্যাটাগরি রয়েছে, তাতে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩-৪ শতাংশের বেশি হওয়ার নয়; কিন্তু তাদের জন্যই মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ কোটা! কী আজব এবং ভয়ানক একটি ব্যাপার।

এ দেশের তরুণ প্রজন্ম প্রতিনিয়তই দেখছে পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষা সবখানেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। মেধাবীদের চাকরিতে প্রবেশের জন্য কোটা নামক কৌটা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। অন্য কোনো দেশে আমাদের দেশের মতো মেধাবীদের এমন বাধা দিলে নিশ্চিত তারা আত্মহত্যা করত।

মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রয়েছে। তারাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার জন্যই এ দেশকে স্বাধীন করেছিল; কিন্তু তাদের আদর্শ এবং দেশপ্রেমকে বিক্রি করে চলছে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর সম্প্রদায়। পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যারও হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা থাকেন নীরবে নিভৃতে।

শোষণ নির্যাতনের শিকার হয়ে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম আজ ফুঁসে উঠেছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে। তাদের এই আন্দোলনের প্রতি সহানুভ‚তিপ্রবণ হয়ে একটি বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমাজ সংস্কারে এগিয়ে আসবে-এটাই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বাধীন বাংলাদেশ,শিক্ষাব্যবস্থা,তরুণ প্রজন্ম,কোটা পদ্ধতি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist