সম্পাদকীয়

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

বাংলায় ফেসবুক আইডি

বছর ঘুরে একুশ এলে সবার মুখেই ভাষাশহীদ ও মাতৃভাষার কথা শোনা যায়। যদিও এখন এর ধরন অনেকটাই পাল্টে গেছে। আগে শুনতাম, এখন দেখি। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় সবাই একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব নিয়ে নানা ধরনের পোস্ট করে থাকে।

একুশ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের অহংকার। রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ অনেকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। ভাষার জন্য হারাতে হয়েছে সেদিন তাজা তাজা তারুণ্যে ভরপুর কিছু প্রাণ। তাদের সম্মানার্থেই মূলত আমাদের এই দিনকে উদযাপন করা। পরে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো বাংলা ভাষাকে সম্মান জানিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকেই প্রতি বছর পৃথিবীতে এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।

বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। যার অবদান সবটুকুই ভাষাশহীদদের। যাদের রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বর্ণমালা ও ভাষার অধিকার। তাদের ঠিক কতটুকু সম্মান ও মূল্যায়ন বর্তমান সময়ে আমরা করতে পারছি বা করছি। ফেসবুকে দু-চার লাইন লেখা, ভোরের কুয়াশা ভেজা সকালে নগ্ন পায়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কালোব্যাজ পরা, রাজপথ ও শহীদ মিনারে দৃষ্টিনন্দন আলপনা আঁকা ও গান গাওয়া ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’-ব্যাস এটুকুই কি যথেষ্ট শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য? পরিস্থিতি এমন হয়েছে, অধিকাংশ স্কুল-কলেজ শুধু সরকারি আদেশ পালন করার জন্য দায়িত্ব পালনের তাগিদে কোনোমতে একুশ পালন করে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে আমরা মাতৃভাষাকে কতটুকু ভালোবাসি, তার প্রমাণ কিন্তু আমাদের চালচলনে পাওয়া যায়। পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে একুট খেয়াল করলেই আমরা হাতেনাতে ধরা পড়ব। সবাই যেন ইউরোপিয়ান জ্বরে দিন দিন আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। বাংলা রেখে পশ্চিমাদের কৃষ্টিকালচার অনুসরণ করছি। ছেলেমেয়েদের ইংরেজি স্কুলগুলোয় পাঠিয়ে যেন গর্ববোধ করছি। এমনকি নিজেরা যখন টিভি সেটের সামনে বসছি, ঠিক তখনো বাংলা রেখে ভিনদেশি কোনো সিরিয়ালে মজে উঠছি। অনেকেই ভেবে থাকেন এগুলো তেমন কিছু না; কিন্তু এই করে করে কিন্তু আজকে আমাদের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধূলিসাতের পথে। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎও।

বাংলা ভাষা যেখানে জাতিসংঘের সপ্তম দাফতরিক ভাষা করার দাবি জানানো হচ্ছে, সেখানে এখনো আমরা ফেসবুকে নিজেদের নাম ইংরেজিতে রাখছি। অনেকেই বলে থাকেন, আমার দেশ-বিদেশে অনেক বন্ধু আছে যারা বাংলা বুঝে না, তাই ফেসবুক আইডিতে ইংরেজি নাম রাখছি। তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, আপনার যে বন্ধুর কারণে আপনি ওটা করছেন, তিনি কি আপনার কারণে তার আইডি তার মাতৃভাষা রেখে আপনার ভাষায় পরিবর্তন করেছে? নিশ্চয়ই করেনি, তাহলে আমি, আপনি কেন করব বা করছি?

মনে রাখতে হবে, নিজেরা নিজেদের যত দিন সম্মান দিতে না জানব, পৃথিবীর অন্য কেউ তত দিন সম্মান দেবে না। অন্যের ভাষা ও কৃষ্টিকালচারকে আমরা অবশ্যই সম্মান জানাই। তবে সেটি করতে গিয়ে যেন আমার মাতৃভাষাকে সামন্যটুকু খাটো করা না হয়, সেদিকে সবার আগে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আসুন মহান ভাষাশহীদ ও একুশকে সম্মান জানাতে শুধু পুষ্পস্তবক অর্পণে সীমাবদ্ধ না থেকে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করি। আর তা শুরু হতে পারে ফেসবুক আইডির ইংরেজি নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফেসবুক,ফেসবুক আইডি,ভাষা,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist