সম্পাদকীয়
আদালতকে শুভেচ্ছা
গতকাল ছিল বসন্তের প্রথম দিন। পহেলা ফাল্গুন। এখন আর কোনো ফাল্গুন আমাকে তেমনভাবে স্পর্শ করে না। যেভাবে করেছে ’৫২, ’৬৯ অথবা ’৭১-এ। গত ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে আমরা যেন আমাদের অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি। হারিয়ে ফেলেছি বসন্তের সেই রূপ-রস অথবা বোধের অহংকারে সমৃদ্ধ মনোজগতের ধ্রুবতারাকে।
বসন্ত এখন করপোরেট পুঁজির রঙিন মোড়কে, বাণিজ্যিক ভালোবাসায় ঝুলে থাকা এক হীরে-জহরতের জড়োয়া নেকলেস। যাকে স্পর্শ করা যায় না। আদরে-সোহাগে আলিঙ্গন করা যায় না। ভালোবাসার শিকলে যাকে বেঁধে রাখা যায় না। কেবলই ভোগের মধ্যেই সবকিছু—সব সম্পর্ক।
অনেক বসন্ত পার হয়ে এসে গতকাল আদালতের রায় আমাদের নতুন করে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেল। বলে গেল, সত্যের পক্ষে এসো। সত্যের পক্ষে থাকো। সত্যের জয় নির্ধারিত
সেই ভোগবাদী দর্শনকে আসামি করে রায় হলো এক মামলার। আদালত বললেন, ‘রুপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চার ভোগবাদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।’ বসন্তের প্রথম দিনে এই দণ্ডাদেশের মধ্য দিয়ে আবার যেন নতুন করে আমরা আমাদের ফেলে আসা ঐতিহ্যকে অনুভব করার সুযোগ পেলাম। আমাদের অনুভবে উচ্চারিত হলো, আলোকিত সবার কাছে পরাভূত হবে অন্ধকার।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে জাকিয়া সুলতানা রুপার ওপর ভোগবাদী ধর্ষকরা যে পৈশাচিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তাকে সত্যের পক্ষে থাকা কোনো আদালতই ক্ষমা করতে পারেন না—আমাদের আদালতও করেননি। যথাযথ শাস্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন, আমরা এখনো সত্যের পক্ষে থাকা সেই লড়াকু সৈনিক।
অনেক বসন্ত পার হয়ে এসে গতকাল আদালতের রায় আমাদের নতুন করে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেল। বলে গেল, ‘সত্যের পক্ষে এসো। সত্যের পক্ষে থাকো। সত্যের জয় নির্ধারিত।’ আর ঠিক একই কারণে আদালতের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হচ্ছে, করপোরেট পুঁজির ভোগবাদী চিন্তা ও চেতনার মৃত্যু হোক। আগামীতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই নেতিবাচক ভোগবাদী চেতনার বিরুদ্ধে এগিয়ে যাব, প্রতিহত করার সব কর্মসূচিতে অংশ নেব।
আমরা মনে করি, এ রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। দ্রুত কার্যকর করা হলে, সমাজে এর একটি ইতিবাচক ফল ছড়িয়ে পড়বে। সমাজের ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষরা অনেকটা সাহসী হবে। বিপরীতে অনৈতিকতার মানসে গড়ে ওঠা ভোগবাদী মানুষরা কিছুটা হলেও তাদের গতিকে স্নথ করতে বাধ্য হবে। পরিশেষে বলতে হয়, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত’।
পিডিএসও/হেলাল