সম্পাদকীয়
নিয়ত যদি ভুল হয়
নিয়তেই হয় যদি ভুল, তাহলে নামাজ হবে না। বাক্যটি সব সময়ের জন্য যেকোনো ক্ষেত্রে সমানভাবে সত্য। অর্থাৎ কাজের শুরুতেই যদি ভুল হয়, সে কাজ কোনো দিন সুফল বয়ে আনতে পারে না। তবে ভুল শুধরে যদি ঠিক নিয়তে আবার নতুন করে শুরু করা যায়, তাহলে হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এবং সবারই উচিত সেই পথে এগিয়ে যাওয়া। কথাটা যত সহজে বলা গেল, বাস্তবতায় ততটা সহজ নয়। নয় বলেই বাংলাদেশের অনলাইনেও মাদকের হাট বসেছে। শুরু হয়েছে হোম ডেলিভারি।
দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়া মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তরুণ সমাজ এখন মরণনেশা ইয়াবায় বুঁদ হয়ে আছে। এই ভয়াবহতা ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চেষ্টার কমতি হয়েছে, বলা যাবে না। তবে এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না যে, সব চেষ্টার মূলে অর্থাৎ নিয়তেই ছিল ভুল। তাই সব প্রচেষ্টা বিফলে গেছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সুফল ঘরে তুলতে পারিনি। পারিনি বলেই মাদকসেবীদের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে।
অনলাইনে অর্ডার দিলেই ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে মাদক। হোম ডেলিভারির এই সুযোগ লুফে নিচ্ছে মাদকসেবীরা। শুধু কি তাই! মাদক নিয়ন্ত্রণে যারা, তারাও সুযোগ লুফে নিতে কার্পণ্য করছে না। ইয়াবা বাণিজ্যে ইতোমধ্যেই পুলিশ সদস্যদের যুক্ত হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, সংসদ সদস্যসহ রাজনীতিকদের যুক্ত হওয়ার কথা। তাই ইয়াবা বাণিজ্যে আজ ঝুঁকি কম, লাভ আকাশছোঁয়া। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। থাকলেও ইচ্ছার অভাব রয়েছে। আর যাদের এসব ইচ্ছার ওপর দাঁড়িয়ে আছে সমাজ, সেই ইচ্ছাগুলো যদি ইয়াবাক্রান্ত হয়; তাহলে আমরা-আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
অনৈতিকতা আজ আমাদের রক্তের মাঝে আশ্রয় নিয়েছে। বিশেষ করে আমাদের রক্তে যতটুকু দেশপ্রেমের প্রয়োজন, সেখানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তা না হলে দেশের নিরাপত্তাকর্মীরা এই অনৈতিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তেন না। জড়িয়ে পড়তেন না এ দেশের সংসদ সদস্যসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী এবং এদের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে যেকোনো মুহূর্তে এ দেশ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হতে পারে।
কেননা মাদক সেবন (বিশেষ করে ইয়াবা সেবন) এ দেশে আজ মহামারী আকারে আত্মপ্রকাশ করেছে। যেকোনো উপায়ে এ মহামারী রুখতে হবে-এটাই আজ সময়ের দাবি।
পিডিএসও/তাজ