ডাকসুর টাকা গেল কোথায়!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে যেন দ্বীপচালান দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ ২৭ বছর হলো বনবাসে রয়েছে এই নির্বাচন। তাকে বনবাসে রাখা হলে কী হবে; এই বনবাসের কারণে কর্তৃপক্ষের ঘরে সুখের কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। বরং মাত্রাটা কিছুটা হলেও বেড়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। কেননা ২৭ বছর ধরে জমা হওয়া ডাকসুর তহবিলের ১১ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রতিবছর সংগঠনের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফি নেওয়া হয়েছে। প্রতি অর্থবছর ডাকসুর অনুকূলে বিশ্ববিদ্যালয় বাজেটেও বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বছর বছর বেড়েছে বরাদ্দের পরিমাণ। কমেছে নৈতিকতা। বেড়েছে অনৈতিক কর্মকান্ডের চর্চা। আর এ অনৈতিকতার সঙ্গে জড়িত যারা, তাদের অনেকেই আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা। নির্বাচন না হলেও ডাকসুর নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে বরাদ্দ রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিয়ম অনুযায়ী, ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) ও জিএসের (জেনারেল সেক্রেটারি) স্বাক্ষর ছাড়া ছাত্র সংসদ তহবিলের টাকা তোলা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ওই দুই পদ শূন্য। তাই এই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা খরচের কোনো কথাই উঠতে পারে না। গত ২৭ বছর ধরে যে টাকা জমা হয়েছে তা এই তহবিলেই থাকার কথা।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সেই তহবিল এখন শূন্য। এ টাকার খোঁজও কেউ জানে না। কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এ টাকা খরচ করা হচ্ছে। তবে কোন খাতে খরচ করা হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা গত ২৭ বছরের মধ্যে প্রশাসন একবারও দিতে পারেনি। এছাড়া ডাকসু নির্বাচন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ নিজের অধ্যাদেশও বছরের পর বছর ধরে কেন লঙ্ঘন করেছে তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই।
আমরা মনে করি, এ টাকা খরচ করার কোনো ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের আছে কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরি। যদি না থাকে, তাহলে কেন খরচ করা হলো তা জানা দরকার। যদি অনৈতিক হয়ে থাকে, তাহলে তা বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিপরীতে খরচ করার ক্ষমতা থাকলে সেটি নিয়মনীতি অনুসরণের মাধ্যমে হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। এখানেও তার ব্যত্যয় হলে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কেননা, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে একসময়ের নন্দিত আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক অবয়বে কোনো প্রকার কালিমা লেপনকে আমরা সমর্থন করতে পারি না। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের এই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ পথে এগিয়ে আসবে।
পিডিএসও/হেলাল