শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল

  ০৪ জানুয়ারি, ২০১৮

সাফল্যের ৭০ বছরে ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম, ঐতিহ্যবাহী, অধিকার আদায় ও রক্ষার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আজ ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি মানবীয় স্লোগানের ওপর নির্ভর করে গঠন করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সময়টা ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। ‘শিক্ষা শান্তি প্রগতি’কে ধারণ করে জাতির জনক আওয়ামী লীগ গঠনের এক বছর আগেই গঠন করেন এই ছাত্র সংগঠনটি। তিনি জানতেন, মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজই পারে মানবীয় দেশ গড়ে তুলতে। তাই বিশ্ববাসী দেখেছে ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮ সালের আয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের ছয় দফা বাস্তবায়ন ও ১১ দফা দাবি প্রণয়ন, ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ সালের নির্বাচন, ’৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে ছাত্রলীগের কর্মীরাই ছিল অগ্রবর্তী সৈনিক। তারা জীবন দিয়েছে মানব অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে। রক্ষা করেছে বাঙালি জাতির সম্মান ও মর্যাদা।

জাতির পিতার ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত, সাম্য-সমতা, অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নের সোনার বাংলার গঠনের জন্য এ ছাত্র সংগঠনের অগ্রণী ভূমিকার কথা মনে রাখতে হবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে। আর বাংলাদেশের ইতিহাস হবে তার বাহক ও রক্ষক। একাত্তরে জাতির পিতা যখন মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন, তখন জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে এই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই সর্বাগ্রে অতীতের মতো রাজপথে বেরিয়ে আসেন। এই ছাত্র সংগঠনটি বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে দিতে জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৭ হাজার নেতাকর্মী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের কোনো সংগঠন সাংগঠনিকভাবে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। একমাত্র ছাত্রলীগই বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সভা করে সাংগঠনিকভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এজন্য সে সভায় সভার এজেন্ডা করে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধে সাংঠনিকভাবে যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রলীগ। সে সিদ্ধান্ত সংগঠনের রেজুলেশন আকারে পাস করা হয় ওই সভায়, যা বাংলাদেশের কোনো সংগঠনই করেনি। কারণ, অন্য সংগঠনের নেতারা যুদ্ধ করেছেন ব্যক্তিগত জায়গা থেকে। একমাত্র ছাত্রলীগই সাংগঠনিকভাবে যুদ্ধ অংশ নেয়। সুতরাং বুকের তাজা রক্ত দিয়ে কেনা যে বাংলাদেশের মানচিত্রে বড় একটি অংশের দাবিদার এই ছাত্রলীগ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে সর্বপ্রথম প্রতিবাদী মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। পঁচাত্তর-পরবর্তী মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আত্মদানের এই মিছিল কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। কিন্তু থেমে থাকেনি প্রতিরোধ। বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিটি সংগ্রামেই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে থাকেন, বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই ছাত্রলীগের ইতিহাস, যা বঙ্গবন্ধুও বলে গেছেন বারবার। গণতান্ত্রিক ইতিহাসের অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলদারী স্বৈরশাসকদের হটাতেও এই ছাত্র সংগঠন জলপাই রঙের পোশাকি সামরিক জান্তাদের শক্ত হাতে জবাব দিয়েছে


এক-এগারোর পরবর্তী চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগ প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে থাকেন, বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই ছাত্রলীগের ইতিহাস, যা বঙ্গবন্ধুও বলে গেছেন বারবার। গণতান্ত্রিক ইতিহাসের অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলদারী স্বৈরশাসকদের হটাতেও এই ছাত্র সংগঠন জলপাই রঙের পোশাকি সামরিক জান্তাদের শক্ত হাতে জবাব দিয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে এ ছাত্র সংগঠনের। থাকবেই বা নয় কেন? শান্তিকামী বিশ্বের অগ্রবর্তী সৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এ ছাত্র সংগঠন। এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতেও দরকার হয় অগণিত নিবেদিত কর্মীর। শুধু কর্মী হলেই চলে না, এদের সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়, দেখাতে হয় সঠিক পথ। ছাত্রলীগের সৃষ্টিকাল থেকে শীর্ষপর্যায়ের নেতারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তাদের এ মহান দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন। হয়েছেন ইতিহাসের নায়ক। ছাত্রলীগ মানবতার কল্যাণে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে দেশের ৫০ লক্ষাধিক ছাত্রদের মহৎ নিয়মশৃঙ্খলে আবদ্ধ করে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু যত মানবীয় নিয়মনীতি রক্ষার বাহক হিসেবে ছাত্রলীগ গঠন করে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর দেশের যোগ্য প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে ছাত্রলীগ। একবিংশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠন অসহায় দুস্থদের পাশে বারবার দাঁড়িয়েছে। ফলে ছাত্রলীগ শুধু আওয়ামী চেতনা থেকে মানবতার চেতনার পথে পথে শান্তি আর মুক্তির বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। মানবতার ডাকে এই ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা নিজের রক্ত দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকার দৃশ্য একাধিকবার দেখেছে শান্তিকামী বিশ্ব। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের সময় হাজার হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেওয়ার পেছনেও আছে সুনির্দিষ্ট কার্যকরণ। আর সে কারণটি হলো, ছাত্রলীগের রক্তের প্রতিটি ফোঁটায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মানবতাবাদী দর্শন, রয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্দীপ্ত, অধিকার আদায়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস। শুধু রক্ত দিয়েই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ক্ষান্ত থাকেনি এই সংগঠন। তারা অসহায়, দুস্থ মানুষের পেটে অন্ন এবং বস্ত্রহীনে বস্ত্র তুলে দেওয়ার বিরল নজিরও স্থাপন করেছে।

২০১৫ সালের এপ্রিলে নেপাল যখন ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়, ছাত্রলীগ তখনো তার দায়িত্বের কথা ভুলে যায়নি। নেপালবাসীর চরম দুর্দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে নেপালবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নেপালিজ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ’-এর হাতে নগদ ছয় লাখ টাকা তুলে দেন সংগঠনটির তৎকালীন নেতারা। পাশাপাশি ছাত্রলীগ মৃত্যুপুরী নেপালবাসীর জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে তহবিল সংগ্রহ করেছে। তহবিল সুষ্ঠুভাবে নেপালবাসীর কাছে দেওয়ার মতো মহৎকাজ করেছে এ সংগঠন।

শেখ হাসিনার অন্যতম সফলতা ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সেই বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোয় পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় ৫০০০০ গাছ লাগায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও মানবতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগ জীবন সংকটাপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়ায় ছাত্রলীগ গঠিত মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে তিন মাসের বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে টানা চিকিৎসাসেবা ও ওষুধসামগ্রী সরবরাহ করে যাচ্ছে, যা একটি ছাত্র সংগঠনের জন্য বড়ই গর্বের বিষয় হতে পারে। কিন্তু ছাত্রলীগের জন্য স্বাভাবিক। কারণ ছাত্রলীগ সূচনালগ্ন থেকেই মানবতার জন্য কাছ করে এসেছে এবং এখনো তা অব্যাহত রেখেছে এবং এভাবেই বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নিজ মহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে, থাকবে ও দীপ্তি ছড়াবে যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রলীগ [email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ছাত্রলীগ,ছাত্র সংগঠন,কলাম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist