খুলনা প্রতিনিধি

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

ইভটিজিং : খুলনায় ২২ দিনে ৩ ছাত্রীর আত্মহত্যা!

খুলনায় ইভটিজিংয়ের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইভটিজিংয়ের শিকার ও লাঞ্ছিত হয়ে গত ২২ দিনে তিন ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটি এ ধরনের উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর রাতে শামীম হাওলাদার শুভ ও তার সহযোগীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে খুলনা সরকারি করোনেশন বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী শামসুন নাহার চাঁদনী (১৩) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় চাঁদনীর বাবা রবিউল ইসলাম বুলু বাদী হয়ে পাঁচজনের নামে থানায় মামলা করেন। পুলিশ এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

২৭ অক্টোবর নিজ বাড়ি থেকে বাজুয়া এসএন ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বন্যা রায়ের (১৮) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনে বন্যার বাবা অনিমেষ রায় দাকোপ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বর্ণদীপ জোয়াদ্দার ও তার বন্ধু অভিজিত ওরফে অভিকে আসামি করে মামলা করেন। প্রধান আসামি অভিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

৫ নভেম্বর প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দাকোপের লাউডোব সরকারি এলবিকে ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জয়ী মল্লিককে (১৮) লাঞ্ছিত করে বাজুয়া এসএন ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি ইনজামামুল হক। ওইদিন রাতে জয়ী কলেজ হোস্টেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় ইনজামামের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন জয়ীর বাবা। গত ১২ নভেম্বর সে খুলনায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

খুলনা পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিনবন্ধু দেবনাথ বলেন, ‘কিছুদিন আগে কলেজ হোস্টেলের পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে মেয়েদের ভয় দেখানো হতো। উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক নিয়মিতই মেয়েদের বিরক্ত করত। এরপর পুলিশে অভিযোগ দেওয়া হয়। সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলি আজিজি বলেন, ‘চাঁদনীর আত্মহত্যার পর স্কুলের পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। স্কুল চলাকালীন উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের আনোগোনা ঠেকাতে পুলিশি টহল জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।’ গোবরচাকা ন্যাশনাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক কুমার বর্মণ বলেন, ‘স্কুলের পক্ষ থেকে উত্ত্যক্তকারীদের উৎপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে থানায় একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মাঝেমধ্যে স্কুলের সামনে এসে টহল দেয়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর বখাটেরা ফের মেয়েদের বিরক্ত করে।’

এ বিষয়ে কামরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে বয়রা হাজি ফয়েজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে যাওয়ার পথে টেক্সটাইল মিল এলাকায় এক যুবক প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করত। ওই যুবককে একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে সেখান থেকে বাসা বদল করেছেন তারা। সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার বলেন, ‘২৫-২৬ অক্টোবর কলেজে যাওয়ার পথে তিন-চার যুবক আমার পিছু নেয়। এ কথা বাসায় জানানোর পর মা নিয়মিত কলেজে পৌঁছে দিয়ে যান।’

খুলনা জেলা প্রশাসক আমিন-উল আহসান বলেন, ‘এখনো বাল্যবিবাহের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বখাটেদের উৎপাত। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে কেএমপিতে নারী নির্যাতন মামলার সংখ্যা কমে আসছে। প্রতি মাসেই নারী নির্যাতন মামলার হার কমছে। খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমিন-উল আহসান বলেন, ‘মাদক ও ইভটিজিং প্রতিরোধে প্রশাসন জোরালো অবস্থানে রয়েছে। উত্ত্যক্তকারীদের রুখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইভটিজিং,খুলনা,ইভটিজিংয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যা,ছাত্রী আত্মহত্যা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist