শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ২২ অক্টোবর, ২০১৭

অপরাধ জগত

ঘড়ি চোর থেকে মাদক চোরাচালানের হোতা

ফারুক হোসেন

লোকাল বাসের ঘড়ি চোর হিসেবে অপরাধ জগতে যাত্রা শুরু। পরে বনে যায় ঘড়ি চোরদের সর্দার। এরপর মাদক পাচার করতে নেমে হয়ে ওঠে বিক্রেতা। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামের রেলস্টেশন ও বরিশাল কলোনিকেন্দ্রিক ইয়াবা ও মাদক স্পটগুলোর। কেবল চট্টগ্রামে নয়; মিয়ানমার ও ভারত থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করত সে।

চট্টগ্রামের মাদক কারবারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ও হোতা এই ফারুক হোসেন অপরাধ জগতে বস ফারুক, কালা ফারুক, বাইট্টা ফারুক ও বিচ্ছু ফারুক নামে পরিচিত। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোড বরিশাল কলোনি এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ফারুক। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় মাদক আইনে ১৮টিরও বেশি মামলা আছে।

সূত্রমতে, পটিয়ার ধলঘাটের ছেলে ফারুক ২০০০ সালের দিকে চট্টগ্রাম নগরে আসে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ফারুক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরুতেই তার অপরাধে হাতেখড়ি। সে সময় স্টেশন রোডে যাত্রীদের ভিড়ে ছোঁ মেরে হাতঘড়ি ছিনিয়ে নিত সে। পরে চুরি-ছিনতাই ছেড়ে ফারুক চোরাইপণ্য কেনাবেচা শুরু করে। অধীনস্ত চোরের দল ঘড়ি, মানিব্যাগ নিয়ে জমা দিত ফারুকের কাছে। ২০০২ সালের দিকে ফারুক ঘড়ি চোরদের লালন-পালন ছেড়ে যোগ দেয় রেলস্টেশনকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটে।

সে সময় ফারুকের বন্ধু কালা বাদলের বড় ভাই সোহেল গার্মেন্টসে চাকরি করত। সেখানে চাকরি করত মনির। বাদলের সূত্র ধরে স্টেশনের সিন্ডিকেটে আড্ডা দিতে আসত মনির। এরপর তাকে পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় সিন্ডিকেট থেকে। লুফে নেয় মনির। এরপর ইউসুফের নেতৃত্বে ফারুক ও মনিরের পরিচালনায় বরিশাল কলোনির মাদক ব্যবসা চলছিল জমজমাট। কিন্তু হঠাৎ করেই ইউসুফকে সরিয়ে দিতে চায় মনির। এতে ফারুক সম্মতি না দিলে দুজনের মধ্যে বিরোধ শুরু। পাল্টাপাল্টি মাদক স্পটের নিয়ন্ত্রণ নেয় মনির-হোন্ডা বাহার সিন্ডিকেট ও ফারুক-ইউসুফ সিন্ডিকেট।

এরই মধ্যে ফারুকদের হামলায় হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় হোন্ডা বাহারের। এরপর বিরোধ থাকায় দুইপক্ষের শক্তিক্ষয় হচ্ছে ভেবে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার মাদক ব্যবসা চালায়। ২০১৫ সালের দিকে পটিয়ায় ফারুককে মারতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মনির। এরপর থেকে চট্টগ্রামের রেলস্টেশন ও বরিশাল কলোনিকেন্দ্রিক ইয়াবা ও মাদক স্পটগুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ফারুক ও ইউসুফ সিন্ডিকেট। তাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আছে আসলাম, পাভেল, মনির, শরীফ, বিপ্লব, বিলাই মনির, কাশেম, জামাল, পলাশ, রুবেল, সোসাইটি মনির, সুমন, জাফর প্রমুখ।

অভিযোগ আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোহারা দিয়ে আসছিল ফারুক ও ইউসুফের সিন্ডিকেট। যার কারণে অভিযানের খবর আগেই ফাঁস হয়ে যেত। বরিশাল কলোনিতে অভিযানে গেলে পরিত্যক্ত মাদক ছাড়া কেউ গ্রেফতার হতো না। এভাবেই বারবার গ্রেফতার এড়িয়ে আসছিল তারা। এমনকি হাতকড়া পরানো আসামিকেও ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে বরিশাল কলোনিতে।

সদরঘাট থানার ওসি মর্জিনা আক্তার বলেন, গত ১ মে বরিশাল কলোনিতে অভিযান চালিয়ে খসরু নামে এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে সময় দুই শ থেকে আড়াই শ লোক পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় হাতকড়াসহ পালিয়ে যায় খসরু। ওই অভিযানে ১০৫ পিস ইয়াবা, ৯৫ বোতল ফেনসিডিল ও মাদক বিক্রির দুই লাখ ৩১ হাজার টাকা উদ্ধার হয়।

র‌্যাবের তথ্যমতে, সম্প্রতি বাংলাদেশে গন্ধহীন হলুদ ইয়াবার যেসব চালান পাওয়া যায় সেগুলো ফারুকই প্রথম চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। এ ছাড়া মিয়ানমার ও ভারত থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করে ফারুক। র‌্যাবের অভিযানে গত ২৩ জুন ১৫ লাখ ইয়াবা ও ১৬ সেপ্টেম্বর উদ্ধারকৃত ১০ হাজার হলুদ ইয়াবার মূল মালিক ফারুক।

এদিকে মাদক বিক্রির টাকায় পটিয়ার ধলঘাটের নিজ গ্রামে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করেছে ফারুক। তার বড় ভাই সেকান্দার হোসেন গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যায়; নির্বাচনে সব খরচের টাকা ফারুক দেয় বলে জানা গেছে।

র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ফারুক নিহত হলেও এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শীর্ষ মাদক কারবারি ইউসুফ। ইউসুফের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ১৮টি মামলা আছে। এ ছাড়া সীতাকুন্ড থানার একটি মামলায় তার কারাদন্ড হয়েছে। সিআইডি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে ইউসুফ দেড় শ কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউসুফের সম্পদের পরিমাণ পাঁচ শ কোটিরও বেশি হবে।

র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফারুক ছিল আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারি। তার অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চোরাচালান,মাদক,ঘড়ি চোর,চট্টগ্রাম,অপরাধ জগত,ফারুক হোসেন,মাদক চোরাকারবারি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist