reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ আগস্ট, ২০১৭

ঘুষ ছাড়া পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়না!

ঘুষ ছাড়া নতুন পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়না বললেই চলে। অবশ্য এই পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে গেলে প্রতি চারজনের তিনজনকেই ঘুষ দিতে হয় বলে জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি। আর দুর্নীতির ঘটনায় ব্যবস্থা নেবে যে সংস্থা, সেই পুলিশই ঘুষ নিয়ে থাকে সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে। আজ সোমবার টিআইবির ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। ‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণাটি করে টিআইবি। তবে পাসপোর্ট নবায়ন বা অন্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমে আসছে বলেও জানান হয় গবেষণা প্রতিবেদনে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৫.২ শতাংশ ২০১৬ এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ এর মে সেবা গ্রহণে (আবেদন উত্তোলন, আবেদন জমাদান, ও প্রি-এনরোলমেন্টে, বায়ো-এনরোলমেন্ট, পাসপোর্ট বিতরণ এবং দালালের সঙ্গে চুক্তি) আনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। যা ২০০৫ সালে ছিল ৭৬.১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পাসপোর্ট আবেদনে সেবাগ্রহীতাদের ৭৬.২ শতাংশ পুলিশী তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হচ্ছে। ৭৫.৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ দিতে হয়েছে। গড়ে এই ঘুষের পরিমাণ ৭৯৭ টাকা। পুলিশি হয়রানির মধ্যে রয়েছে, অযথা ত্রুটি খুঁজে বের করা, জঙ্গি বা অন্য রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো, বাড়িতে না গিয়ে থানা বা চায়ের দোকানে ডেকে আনা এবং ঘুষ দাবি করা হচ্ছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জান বলেন, দুর্নীতি বন্ধে সত্যায়ন প্রক্রিয়া এবং পুলিশি তদন্ত বন্ধ করে দেয়া উচিত। পাসপোর্ট অফিস এই পুলিশি তদন্ত বন্ধের দাবি করলেও পুলিশ এটা চাইছে না। পুলিশ ভেরিফিকেশনের বদলে ‘বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক’ এবং ‘অপরাধী তথ্য ভা-ার’ তৈরি করে তার সঙ্গে পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সংযোগ স্থাপন করার সুপারিশ করেন ইফতেখারুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে জানান হয়, পুলিশ ঘুষ আদায়ে নানা কৌশল গ্রহণ করে। তারা অযথা আবেদনপত্রে ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। জঙ্গি কার্যক্রম বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহের কথা বলে ভয় দেখায়। বাড়িতে না গিয়ে চায়ের দোকান বা থানায় ডেকে পাঠায়। গবেষণা প্রতিবেদনে জানান হয়, পাসপোর্ট সেবায় প্রক্রিয়াগত জটিলতা, দালালদের দৌরাত্ম্য, পুলিশি তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতি, জনবলের ঘাটতি, কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতি এই খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা।

টিআইবি বলছে, পাসপোর্টের আবেদনকারীদের মধ্যে ৪১.৭ শতাংশ দালালদের সহযোগিতা নিচ্ছে। দালালদের একটি অংশের সাথে এসবি পুলিশ ও পাসপোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। দালালরা যে টাকা নেয় তার একটি অংশ পুলিশ ও পাসপোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেয়। এই দালালদের একটি অংশের সাথে সত্যায়নের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ জড়িত।

টিআইবির ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই দালালরা সুযোগ পাচ্ছে। ভেতর থেকে কারা প্রশ্রয় দিচ্ছে সেটাকে আগে চিহ্নিত ও দমন করতে হবে। তিনি পুলিশ ভেরিফিকেশনকে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, আগে কোনো কিছু করতে হলেই বলা হত- পুলিশের কাছে থেকে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট লাগবে। সেখানে লেখা থাকত- ‘ওই ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত নয়’। এখন এই সময়েও জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের যে অবিশ্বাস সেটা রয়ে গেছে।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পুলিশ ভেরিফিকেশন,পাসপোর্ট,ঘুষ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist