গাজীপুর প্রতিনিধি

  ০৩ মে, ২০২০

থাপ্পরের প্রতিশোধ নিতে ৫ বছরের শিশুকে অপহরণ-হত্যা

থাপ্পর মেরে শাসন করায় প্রতিশোধ এবং দ্রুত ধনী হওয়ার স্বপ্নে দুই ভাড়াটিয়া বাড়ির মালিকের ৫ বছর বয়সিকে এক শিশু সন্তানকে হত্যা ও পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি পারিজাত এলাকায়। র‌্যাব ১-এর সদস্যরা শনিবার রাতে শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার এবং অপহরণ ও হত্যায় জড়িত সাগরকে (১৯) আটক করেছে।

রোববার দুপুরে ব্যাব ১-এর গাজীপুরের পোড়াবাড়ি ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।

নিহত শিশু আলিফ হোসেন (৫) কোনাবাড়ি পরিজাতদ এলাকার ফরহাদ হোসেন। আটক সাগর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পদিপাড়া রফিক উল্লাহ ছেলে। সে ফরহাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং পেশায় গার্মেন্ট শ্রমিক।

র‌্যাব জানায়, গত ২৯ এপ্রিল বিকলে আলিফ হোসেন তার নিজ বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। নির্খোঁজের পর তার পরিবার সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করে না পেয়ে কোনাবাড়ি থানায় জিডি করেন। নিখোঁজের পরদিন ভিকটিমের বাবার মোবাইল ফোন অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন আসে এবং তার শিশু সন্তানকে তারা অপহরণ করেছে জানিয়ে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় অপহরণকারীরা তার ছেলেকে হত্যা করে লাশ গুম করবে বলে হুমকি দেয়। পরে গত ২ মে ভিকটিমের পরিবার র‌্যাব-১ গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পে গিয়ে অপহৃত ছেলের মুক্তির জন্য আইনগত সাহায্য কামনা করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদে জানতে পারে, ওই অপহরণকারীরা একই সিটি করপোরেশনের পূবাইল এলাকায় মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। পরে কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পূবাইল রেললাইন এলাকা থেকে সাগরকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে তাদের ভাড়াকৃত ফ্ল্যাটের একটি ঝুটের গুদামের ভেতর থেকে আলিফ হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, আটক সাগরের ভাষ্যমতে—সে পেশায় গার্মেন্টস কর্মী। তারা তিন বন্ধু মিলে একই রুমে গত ৬ মাস যাবৎ ভিকটিমদের বাড়ির ৩য় তলার ফ্লাটে বাসা ভাড়া থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করে আসছে। ভবনের ছাদে উঠে মেয়েদের ডির্স্টাব করার কারণে গত এক সপ্তাহ আগে বাসার মালিক ভিকটিমের বাবা সাগরের রুমমেট জুয়েল আহমেদ ওরফে সবুজকে কয়েকটি চড়-থাপ্পর দেন। এ থাপ্পর মারার প্রতিশোধ নিতে ও দ্রুত ধনী হওয়ার স্বপ্নে সবুজ ও সাগর মিলে ভিকটিমকে হত্যা করে লাশ গুম করে। পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে ভিকটিমের বাবার কাছে ২০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করে।

সাগর র‌্যাবকে জানায়, পূর্ব পরিকল্পনায় সাগর ও জুয়েল ২৯ তারিখ বিকেলে পরিবারের সবার দৃষ্টির আড়ালে বাসা থেকে আলিফকে ছাদে নিয়ে যায়। পরে সেখানে আলিফকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশটি একটি প্লাস্টিকের বস্তার ভেতর ভরে বাসার ঝুটের গুদামে রাখে। ওই রাত তারা ভাড়াবাড়িতে যাপন করে সকালে ঢাকায় চলে যায় এবং মোবাইলে অপহরণের কথা জানিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করে ও ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে নগদ ২০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলে।

এদিকে ফরহাদ হোসেন গত তিন দিন অপহরণকারীর কথামতো টাকা নিয়ে গোপনে উত্তরা, আবদুল্লাপুর, টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ছেলেকে ফিরে পাবার জন্য ঘোরাঘুরি করে। অবশেষে মুক্তিপণের টাকা বিকাশে লেনদেনের পূবাইল রেলস্টেশন এলাকা থেকে সাগরকে আটক করা হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
থাপ্পর,অপহরণ,শিশু হত্যা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close