জুবায়ের চৌধুরী

  ০৪ মার্চ, ২০২০

ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার

ভয়ংকর রূপে রোহিঙ্গারা

হেন অপরাধ নেই তারা করছে না

দিন যত যাচ্ছে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। খুন-ধর্ষণ থেকে শুরু করে চুরি-ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার ও মাদক চোরাকারবারিসহ হেন অপরাধ নেই তারা করছে না। কর্মহীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে দিনে দিনে বাড়ছে নানা রকম অপরাধ প্রবণতা। তাদের এই বেপরোয়া আচরণে বিষিয়ে উঠছে স্থানীয়রা। রোহিঙ্গারা এখন তাদের কাছে বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নাজুক।

রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা অপরাধের দায়ে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা কারাভোগ করছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ত্বরিত প্রত্যাবাসন করা না গেলে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের জনজীবন আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করলে উখিয়া-টেকনাফসহ আশপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুই বছরে ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানব পাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১টি। এর মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সংক্রান্ত মামলা ৩১টি। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৮৮ রোহিঙ্গা। প্রত্যাবাসনের পক্ষে ও বিপক্ষে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। ‘হিট পয়েন্ট গ্রুপ’ ও ‘আল-ইয়াকিন’সহ কয়েকটি রোহিঙ্গা গোষ্ঠী অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

সবশেষ গত সোমবার কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাব ও বিজিবির সঙ্গে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৮ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন ও বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হন। নিহতরা কুখ্যাত রোহিঙ্গা ডাকাত জকি গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এমনকি নিহত সাতজনের লাশ নিয়ে ফেরার পথে র‌্যাব ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ফের গুলিবর্ষণ করেন ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। সবকিছু বিবেচনা করে দীর্ঘ সময়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় ক্যাম্পগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১৬তম ইউনিটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নবগঠিত এ ইউনিটের জন্য সৃজন করা হয়েছে ৫৮৮টি পদ। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।

নবগঠিত গঠিত ১৬ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠাকালেই দায়িত্ব সামলাবেন এসপি হেমায়েতুল ইসলাম। সেই সঙ্গে দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, চারজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), ৯ জন পরিদর্শক, ৩১ জন উপপরিদর্শক, ৪৫০ কনস্টেবলসহ প্রায় ৫৮৮টি পদ থাকছে নতুন এ ব্যাটালিয়নে। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১৬তম ইউনিটের অনুমোদন দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের অপরাধ কার্যক্রম ঠেকাতে এবং নিরাপত্তার জন্য মাঠপর্যায় থেকে ক্যাম্প এলাকায় অন্তত তিনটি থানা এবং একাধিক পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মো. সোহেল রানা জানান, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ১৬ এপিবিএন প্রধানত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং রোহিঙ্গাদের চলাচল ক্যাম্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে কাজ করছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ইউনিটটি গঠিত হওয়ার পর অর্পিত দায়িত্ব পালনে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।

২০১৭ সালে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর স্মরণকালের ভয়াবহ বর্বরতা শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা। তাদের ওপর চলে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বীভৎস সব নির্যাতন। এতে প্রাণরক্ষায় দলে দলে বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুরা। মানবিকতার কারণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্তপথ খুলে দিয়ে নিপীড়িত প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ সরকার। সীমান্তের দুই উপজেলার সাড়ে ৮ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমিতে আশ্রয়স্থল তৈরি করে ৩৪টি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে নতুন পুরোনো প্রায় সোয়া ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে। বাংলাদেশের এ মানবিকতা বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা,নিরাপত্তা,অপরাধ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close